আনোয়ারায় বাড়ছে লবণ চাষ

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার উপকূলবেষ্টিত দুই ইউনিয়নে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত্ম সময় পার করছেন চাষিরা। চিংড়ি ঘের গুটিয়ে লবণ মাঠ তৈরি করে লবণ উৎপাদন শুরম্ন করেছেন তারা। গত দুই বছরে পরীক্ষামূলক লবণ চাষের সাফল্যকে পুঁজি করে এ বছর চাষিরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন।
শনিবার সরেজমিনে বারশত ইউনিয়নের পারকির চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় আড়াই’শ একর মাঠজুড়ে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যে মাঠ চাষে ব্যস্ত্ম অর্ধশতাধিক চাষি পরিবার। সকাল থেকে শুরম্ন করে সন্ধ্যা অবধি যেন চাষিদের ফুরসৎ নেই।

উপজেলার উপকূলীয় দুই ইউনিয়ন রায়পুরের দক্ষিণ গহিরা ও বারশতের পারকির চর এলাকায় লবণ চাষ হচ্ছে। এখানে আগে তেমন জনপ্রিয় ছিল না লবণ চাষ। কয়েক বছর ধরে কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া ও পেকুয়া এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার চাষিরা আনোয়ারা উপকূলে লবণ উৎপাদন শুরম্ন করে। কম খরচে উৎপাদন ভালো হওয়ায় দিন দিন লবণ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে অনেকে। বছরের পর বছর বাড়ছে লবণ চাষের মাঠ। এসব মাঠে পুরোদমে শুরম্ন হয়েছে লবণ উৎপাদন প্রক্রিয়া।
জানা যায়, উপজেলার দক্ষিণ গহিরা ও পারকির চর এলাকায় চলতি মওসুমে বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার অর্ধশতাধিক চাষি প্রায় ২৫০ একর জমি লাগিয়ত নিয়ে লবণ উৎপাদন শুরম্ন করেছেন। গেল মওসুমে সেখানে লবণ চাষ হয়েছিল ৪০ থেকে ৫০ একর জমিতে।
চাষিরা জানান, লবণ চাষের জন্য প্রথমে জমিকে ছোট ছোট ভাগ করে নেয়া হয়। এরপর ভেজা মাটিকে রোলার দিয়ে সমান করে বিছিয়ে দেয়া হয় মোটা পলিথিন। জোয়ার আসলেই মাঠের মাঝখানে তৈরি করা গর্তে জমানো হয় সাগরের লবণ পানি। বালতি ভরে বিছানো পলিথিনের উপর রাখা হয় পানি। জলীয়বাষ্প হয়ে উড়ে যায় পানি আর মাঠে জমে যায় লবণের আস্ত্মরণ। সেই লবণ তুলে স্ত্মূপ করে রাখা হয় যেন পানি সরে যায়। এরপরই বস্ত্মায় ভরে লবণ তুলে দেয়া হয় বেপারীর হাতে। চাষিরা আধুনিক পলিথিন ও সনাতন পদ্ধতিতে মাঠে লবণ চাষ করছেন।
চকরিয়ার শফিকুর (৩৫) ও কুতুবদিয়া থেকে আসা চাষি জামাল উদ্দিন (৪২) জানান, প্রতি মওসুমের জন্য কানি প্রতি (৪০ শতক) জমি তিন হাজার টাকায় লাগিয়ত নিই। প্রতি কানিতে চাষাবাদে খরচ পড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। এতে লাভ হয় খরচের দ্বিগুণ।
তারা আরও বলেন, ২৫০ একর মাঠে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫০ হাজার মণ। প্রতি মণ লবণ নূ্যনতম ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসেবে বাজারমূল্য দাঁড়াবে ছয় কোটি টাকা। এদিকে সাধারণ লবণচাষিরা বলেন, সরকার যদি আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকায় উৎপাদিত এসব লবণ রপ্তানিতে সহযোগিতা করেন তাহলে এখানকার লবণচাষিরা আরও বেশি উপকৃত হবে। তারা এই লবণশিল্প রক্ষা এবং মানসম্মত করার জন্য লবণ উৎপাদনে সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ বলেন, পারকির চর এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লবণচাষ। কম খরচে লাভ বেশি তাই স্থানীয়রাও লবণচাষে ঝুঁকছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও পাঁচ মাস লবণ উৎপাদন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একরাম উদ্দীন বলেন, উপজেলার দক্ষিণ গহিরা ও পারকির চল এলাকায় লবণ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে চাষিদের আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।