মণিরামপুরে হিমঠান্ডায় বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও মণিরামপুরে থেমে নেই বোরো আবাদের জমি তৈরি ও ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম। কপোতাক্ষ ও ভবদহ পাড়ের চাষিরা বোরো আবাদের জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করে চলেছেন জমি তৈরির কাজে। হাঁড় কাঁপানো শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে কাঁকডাকা ভোর থেকেই চাষিরা বোরো চাষের জন্য জমি তৈরি ও ধানের চারা রোপণ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অপেক্ষাকৃত কিছুটা উঁচু জমিতে ইতোমধ্যে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়েছে। আর কিছুটা নিচু ও জলামগ্ন এলাকার চাষিরা জমি চাষোপযুক্ত করতে পানি নিষ্কাষণ করে যাচ্ছেন। এবারের বোরো চাষ বিগত কয়েক বছরের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি দফতর।
সরেজমিনে উপজেলার পূর্বাঞ্চলীয় ভবদহ ও পশ্চিমাঞ্চলীয় কপোতাক্ষ পাড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জমি চাষোপযুক্ত করতে নিচু জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য স্যালোমেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ঘের-ভেড়ি এলাকায় এবারের নাবী বর্ষায় পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, ফলে তা শুকাতে দেরি হওয়ায় স্যালোমেশিনের সাহায্যে পানি অপসারণ করে তা পার্শ্ববর্তী নদী বা খালে প্রবাহিত করা হচ্ছে। তবে অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে ইতোমধ্যে ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা বিগত বছরের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বেশি। উপজেলা ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌর এলাকার প্রায় সব মাঠেই বোরো ধানের আবাদ হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ধান চাষ হয়ে থাকে খেদাপাড়া, দুর্বাডাঙ্গা, হরিহরনগর, কাশিমনগর, রোহিতা ইউনিয়ন এলাকায়। তবে ভবদহ অঞ্চলের মনোহরপুর, নেহালপুর, কুলটিয়া, হরিদাসকাটি ও ঢাকুরিয়া এলাকায় কয়েক বছর জলাবদ্ধ থাকার পর গত দু’বছর থেকে আবারো বোরো ধানের আবাদ শুরু হয়েছে। উপজেলার চাষিরা উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রীড ব্রি-২৮, ৫০, ৫২, ৬৩ ইত্যাদি জাতের ধান চাষে বেশী আগ্রহী।
স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের দেয়া তথ্যমতে, মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় পনের শতাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তবে চারা রোপনের জন্য প্রায় অর্ধেক জমি তৈরি সম্পন্ন। পুরো কার্যক্রম শেষ করতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় লেগে যাবে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা হয় দুর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরহাদ শরীফের সঙ্গে। লাইন শোয়িং পদ্ধতিতে ধান চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছেন তিনি। ফরহাদ শরীফ জানান, তার এলাকার চাষিরা ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক চাষযোগ্য জমি বোরো ধান চাষের উপযোগী করে তুলেছেন। আগামী মাসের ১০/১২ তারিখের মধ্যে সকল চাষযোগ্য জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ শেষ হতে পারে। মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত কুমার তরফদার জানান, নভেম্বর মাসের অনাকাক্সিক্ষত বর্ষায় এবারে ডাল বা মসূর জাতীয় ফসলের চাষ অনেকটা ব্যহত হয়েছে, সেসব জমিতে এবারে বাড়তি বোরো ধানের চাষ হচ্ছে। সার-ডিজেলের দাম ও প্রাপ্যতা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে, বিদ্যুতের অবস্থাও অনেক ভালো। তাছাড়া সর্বপোরী ধানের দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় বোরো চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলে এবারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অন্যান্য বারের চেয়ে বেশি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।