নতুন ধান উদ্ভাবনে সফল কৃষক সেন্টু হাজং

কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ১৯ প্রকারের দেশি নতুন জাতের আমন ধান উদ্ভাবন করে সাড়া ফেলেছেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কৃষক সেন্টু কুমার হাজং। তার উদ্ভাবিত সাতটি ধানের নাম দেয়া হলেও বাকি ধানের নাম এখনও দেয়া হয়নি। এছাড়া গবেষণার সুবিধার্থে এবং আরও উন্নত জাত উদ্ভাবনের জন্য দেশি বিলুপ্ত জাতের ৩৫ প্রকার ধান বীজ এই কৃষক বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করে চলেছেন। শেরপুর জেলা ও বাইরের জেলার অনেক কৃষক তার উদ্ভাবিত ধান বীজ নিয়ে চাষাবাদ করে ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। বোরো জাতের ৪টি ধান নিয়ে গবেষণার কাজও তার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নিভৃত চাটকিয়া গ্রামের কৃষক সেন্টু হাজং। ধান গবেষণা বিষয়ে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এসএসসি পাস করার পর তিনবার প্রচেষ্টা চালিয়েও এইচএসসির গণ্ডি পার হতে পারেননি। ২০০৫ সালে একটি বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে পাহাড়ি দরিদ্র কৃষকদের ‘জৈব পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও নতুন জাতের ধান উদ্ভাবন’ শীর্ষক স্বল্প সময়ের একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধান সৃষ্টি করার জন্য সেন্টু হাজং প্রথমে নতুন ধান উদ্ভাবনে কয়েক দফা প্রচেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় তিনি শুনেছিলেন ফিলিপাইনের কৃষকরা ধান গবেষণার মাধ্যমে নতুন ধান বীজ উদ্ভাবন করে নিজেরা চাষাবাদ করেন এবং ভালো ফলন পান। এ কথাটাই তার তার মাথায় সারাক্ষণ ধরে ঘুরপাক খেতে থাকে। তাই ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে অনেক কষ্ট করে প্রতি বছর পরীক্ষামূলকভাবে মাটির টবে ধান পরাগায়ন করে উৎপাদনের মাধ্যমে মুঠি মুঠি সেই ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করতেন। সেই বীজ পর্যায়ক্রমে চাষাবাদ করে ১৯ প্রকারের আমন ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন। এ জাতগুলো কৃষকরা নিয়ে রোপণ করছেন এবং লাভবান হচ্ছেন। কোনো ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি বা গবেষণাগার ছাড়াই নিজের হাতে পরাগায়নের মাধ্যমে নতুন জাতের ধান তিনি উদ্ভাবন করেছেন। গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য দেশি বিলুপ্ত জাতের ৩৫ প্রকারের আমন ধানের বীজ তার সংরক্ষণে রয়েছে। উদ্ভাবিত ধানের বীজ ও বিলুপ্ত জাতের আমন ধানের বীজ কাপড়ের পোটলা করে এবং ধানের ছড়া বেঁধে ছোট ছোট কাগজে লিখে তিনি প্লাস্টিকের ড্রামে সংরক্ষণ করছেন। বর্তমানে ৪টি বোরোর জাত উদ্ভাবনের জন্যও তিনি কাজ করে চলেছেন।

নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনকারী কৃষক সেন্টু কুমার হাজং জানান, ১৯টি আমন ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য এক একর জমিতে ২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২ মিটার প্রস্থের অনেক প্লট করতে হয়েছে। জাতগুলো বিভিন্ন উচ্চতর হয়ে থাকে। এ জাতের ধান গাছগুলো বাতাসে হেলে পড়বে না, এগুলোই তার উদ্ভাবিত জাতের ধানের বৈশিষ্ট্য। ধান উদ্ভাবনের কাজটা খুবই ধৈর্য ধরে মনোযোগ দিতে হয়। এটা আসলে খুবই সূক্ষ্ম কাজ। তার উদ্ভাবিত ১৯ জাতের ধানের মধ্যে যে ৭টি ধানের নামকরণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- সোনালু, সেন্টু গোল্ড-৫, মেরিগোল্ড, রানীশাইল, রূপাশাইল, সেন্টুশাইল ও বিশালী বিন্নি। নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শরিফ ইকবাল বলেন, সেন্টু হাজং ধানের জাত উদ্ভাবনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। কারিতাস থেকে অল্প কয়েক দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের আগ্রহের কারণে এ কাজটি করে যাচ্ছেন। তার বিজ্ঞানসম্মত সংরক্ষণাগারও নেই। যে কাজটি তিনি করছেন সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ।