দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে কনটেইনার ওঠানামায় নতুন রেকর্ড গড়েছে। ২০১৬ সালে যেখানে ২৩ লাখ ৪৬ হাজার একক কনটেইনার ওঠানামা হয়েছে, সেখানে ২০১৭ সালে হয়েছে ২৫ লাখ ৬৬ হাজার একক।
শতাংশের হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সোয়া ১০ শতাংশ।
শুধু তা-ই নয়, চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার পূর্বাভাসকেও ছাড়িয়ে গেছে এই রেকর্ড। মহাপরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, ২০১৮ সালে কনটেইনার ওঠানামা হবে প্রায় ২৪ লাখ একক আর ২০১৯ সালে হবে ২৬ লাখ ৬৬ হাজার একক। দুই বছর পরের পূর্বাভাস এখনই পূরণ করল চট্টগ্রাম বন্দর।
প্রতিক্রিয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা দিয়েই এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে। আমরা চাই, কম সময়ে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। এই ধারাবাহিকতা বহাল থাকলে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের তালিকায় ৭১তম অবস্থান থেকে আরো এগিয়ে আসবে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন এই চট্টগ্রাম বন্দর। ’
বন্দরের হিসাবে, বিগত ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কনটেইনার ওঠানামা হয়েছিল ২৩ লাখ ৪৭ হাজার একক। ২০১৭ সালে হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ ৬৭ হাজার একক।
শতাংশের হিসাবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সোয়া ১০ শতাংশ। আর সাধারণ পণ্য ওঠানামার প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা করেছে জার্মানির হামবুর্গ পোর্ট কনসাল্ট (এইচপিসি)। সেখানে বলা আছে, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি) এবং জেনারেল কনটেইনার বার্থ (জিসিবি) মিলিয়ে ২০১৭ সালে কনটেইনার ওঠানামা হবে ২১ লাখ ৬৮ হাজার একক। ২০১৮ সালে হবে প্রায় ২৪ লাখ একক। আর ২০১৯ সালে হবে ২৬ লাখ ৪৬ হাজার একক। বিদেশি কম্পানির সেই পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য ওঠানামা। ২০১৯ সালের পূর্বাভাস দুই বছর আগেই পূর্ণ করেছে বন্দর।
চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক মাহবুবুল হক চৌধুরী বাবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা প্রণয়নকারী বিদেশি কম্পানি আঁচ করতেই পারেনি চট্টগ্রাম বন্দরের এই প্রবৃদ্ধি হবে। তা না হলে দুই বছর পরের লক্ষ্যমাত্রা কিভাবে এখন অর্জিত হয়। মূলত বর্তমান সরকারের আমলে দেশে শিল্প ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় কনটেইনার ও সাধারণ পণ্য ওঠানামায় এই অগ্রগতি হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে দেশের একমাত্র ভরসা এখনো চট্টগ্রাম বন্দর। সুতরাং প্রবৃদ্ধির সঙ্গে মিল রেখে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার ও সাধারণ পণ্য ওঠানামা বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজে করে না। বন্দরের নিয়োগকৃত অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে আসছে। যথেষ্ট আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পণ্য ওঠানামায় বাড়তি সময় লাগার অভিযোগ আছে। এর পরও পণ্য ওঠানামায় এই অগ্রগতি হয়েছে।
জানতে চাইলে বার্থ অপারেটর, শিপ হ্যান্ডলিং ও টার্মিনাল অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশের ব্যবসার অগ্রগতির ওপরই বন্দরে এই প্রবৃদ্ধি। আর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণেই এই অর্জন সম্ভব হয়েছে। ’ তিনি বলেন, ‘পণ্য ওঠানামায় ব্যবহৃত বড় যন্ত্রগুলো যদি আমাদের কেনা এবং পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে নিঃসন্দেহে অগ্রগতি বাড়বে এবং কম সময়ে দ্রুত পণ্য ওঠানামা করা সম্ভব হবে। ’
মহাপরিকল্পনার পূর্বাভাস বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা প্রবৃদ্ধির বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে সক্ষমতা চলতি ২০১৮ সালের আগেই পূর্ণ হবে। এই সময়ের মধ্যে নতুন টার্মিনাল কার্যক্রম শুরু না হলে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে আর এতে সংকটে পড়বে চট্টগ্রাম বন্দর। বন্দরের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত জাহাজগুলো বন্দরে ভিড়তে পারবে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী জাহাজগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আধুনিক যন্ত্রপাতি যোগ করে, বন্দরে কাজের দক্ষতা ও পণ্য রাখার সক্ষমতা বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবে। এ ছাড়া পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল, বে টার্মিনাল, কর্ণফুলী টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।