সাতক্ষীরায় পান চাষ করে অনেকের ভাগ্য বদল হয়েছে। পান চাষে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও লাভবান হওয়ায় দিন-দিন এর কদর বাড়ছে। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা এ পেশায় ঝুকে পড়েছে। এছাড়া সাতক্ষীরার ঝাল পানের কদর সারা দেশে। তাই ঝাল পান চাষ এ জেলাতে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এছাড়া সাতক্ষীরায় উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতের পান মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচেছ। এ জেলার উৎপাদিত পানের ৭০ শতাংশই রফতানি হয়ে থাকে বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে। চলতি বছর সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় প্রায় চার হাজার বিঘা জমিতে ঝাল ও মিষ্টি জাতের পানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তালা উপজেলায় প্রায় ৮০ শতাংশ ।
আবু জাহিদ। পাটকেলঘাটার খলিষখালি ইউনিয়নের মঙ্গলানন্দকাটী গ্রামের আবু তালেবের ছোট ছেলে। কথা হয় তার সাথে। মাদ্রাসা থেকে দাখিল,আলিম ও ফাযিল পাশ করার পর চাকরি খুঁজতে শুরু করেন। অভাবের সংসারে হাল ধরতে হয় এসময় তাকে। তাই সংসার চালাতে উপার্জনের পথ খুঁজতে হয়।
তাছাড়া চাকরিতে যে পরিমাণ ডোনেশান দিতে হবে সে পুজি ও তার ছিল না। হতাশ না হয়ে জীবন যুদ্ধকে জয় করার প্রবল বাশনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এক বন্ধুর পরামর্শে কৃষিতে ডিপ্লোমা কোর্স করার সিদ্ধান্ত নেন। ডিপ্লোমা শেষ করে অল্প পুজি নিয়ে পান চাষ শুরু করেন। মাত্র ১০ শতক জমির উপর ২০০৮ সালেতার প্রথম পান চাষের যাত্রা।
গ্রাম্য পান চাষিদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তার প্রথম পান চাষ । ছয় মাসের মধ্যে পানে সফলতা ফিরে আসে। বর্তমানে তার ক্ষেতে কয়েক শ্রমিকও কাজ করে। আর নিজে সারা বছর এ পান ক্ষেতে শ্রম দেন। তিনি জানালেন,পান চাষ করেই তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। অভাব-অনাটনের সংসারে আজ তিনি মোটা মুটি সুখি। পিছে ফিরে তাকে আর তাকাতে হয়নি। তার দাবি ভারতীয় পান আসা বন্ধ করতে পারলে পান চাষিরা লাভবান হবে।
তালা উপজেলার ইসলামকাটি গ্রামের পানচাষি দ্বীনো বন্দু কুমার জানান, চলতি মৌসুমে আট বিঘা জমির ওপর একটি বরজে পান চাষ করেছেন। এবার তার বরজে পানের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। বাজারে পানের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কাউন (১২৮০টি) পানের বাজারদর হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার স্থানীয় পাটকেলঘাটা বাজারে পান বিক্রি হয়। তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখানকার পান কেনেন। সপ্তাহে দুই দিন হাট বসলেও হাজার হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের পান কেনাবেচা হয়। এবার আট বিঘা জমিতে পান চাষ করে উৎপাদন খরচ বাদে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মতো লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
এজেলাতে যত পান হয় তার ৮০ ভাগই শুধু তালা উপজেলাতে। তালা উপজেলার পান চাষিদের এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। পান বাংলাদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল না হলেও উপজেলার বিভিন্ন এরকায় পান চাষ আজও জনপ্রিয়তা ধারণ করে আছে। পান চাষে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও লাভবান হওয়ায় দিনদিন অর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে বিগত দিনগুলোতে ধান, পাট, গম, আখ ইত্যাদি চাষাবাদ করা হতো বর্তমানে সেখানে অধিকাংশ জমিতে পানের বরজ গড়ে উঠেছে। জানতে চাইলে কয়েকজন পান চাষি ও ব্যবসায়ী জানান, অন্য ফসলের তুলনায় পান চাষ অধিক লাভবান হওয়ায় তারা এ চাষকে প্রাধান্য দিয়েছে।
উপজেলার রহিমাবাদ, মোবারকপুর, খাজরা, হরিশচন্দ্রকাটী, মাছিয়াড়া, চরগ্রাম, মাগুরা, খলিশখালী .মঙ্গলানন্দকাটী,দুধলাই,বারুইপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকাতে পান চাষ হচ্ছে। রহিমাবাদ গ্রামের মৃত ইসমাইল সরদারের পুত্র জাকির সরদার জানান, আমি ২০০৫ সালে ১ বিঘা পানের বরজ করেছি। তাতে আমার ২ ছেলে ১ মেয়ের লেখাপড়াসহ সাংসারিক সকল খরচ পান চাষ থেকে আসে। পান চাষ করে আমি সাবলম্বী হয়েছি। চরগ্রামের আব্দুল্লাহ মোল্যা জানান আমি ৩ বিঘা জমিতে পান চাষ করে সাংসারিক খরচ ছাড়াও অনেক ঋণ ছিলাম সেগুলো পরিশোধ করেছি। পান চাষে নিজেকে অনেক লাভবান মনে করছি। মোবারকপুর গ্রামের মৃত আলী মোড়লের পুত্র কুদ্দুস মোড়ল জানান, পান চাষ করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি। কিন্তু পান চাষে মুল উপাদান খৈলের দাম অনেক বেশী এখন ১ বস্তা ৭০ কেজি খৈল বিক্রয় হচ্ছে ২২শ টাকা কিছুদিন পরে দাম বেড়ে ৩ হাজার টাকা হবে। তিনি আরও বলেন সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন সকালে তালা বাজারে হাট বসে তাতে একপন পান এখন ৮০/১২০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।
রাঢ়ীপাড়া গ্রামের নুর আলী গাজী, কুমিরা গ্রামের মুসা সরদার, হাবিবুর রহমান জানান, ৩-৪ বিঘা পর্যান্ত জমিতে তাদের পান চাষ ছিল। কিন্তু প্লাবিত হওয়ার কারণে পান গাছ পচা ধরায় পানের বরজ নষ্ট হয়েছে। সমস্ত অর্থ বিনিয়োগ করায় বর্তমানে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে অনেকের।
পান চাষিদের দাবি পানচাষে সরকারি সহায়তা পেলে এবং পান চাষের সামগ্রীর দাম কম হলে আমরা আরও অনেক মুনাফা অর্জন করতে পারব বলে অধিকাংশ চাষিরা জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা জেলা খামার বাড়ির উপপরিচালক আব্দুল মানান জানান,কৃষকদের পান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ কমিরা কাজ করে যাচ্ছে। পান চাষিরা পরামর্শ চাইলে খামার বাড়ির পক্ষ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।