বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে এই বছরের শুরুতেই শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেয়। অনেক কারখানা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নামে। তারা কর্মবিরতি পালন করে রাস্তায় বিক্ষোভ করে। এতে সরকার ও মালিকপক্ষ কঠোর অবস্থানে চলে যায়। আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করে এবং আন্দোলনকারীদের বেতন কর্তন করা হয়। ফলে ক্রেতাদের সমালোচনার মুখে পরে এই শিল্প।
বছরের মাঝামাঝিতে এসে আরেক সংকটে পরে ৪৫ লাখ শ্রমিকের এই শিল্প। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধ্বসের পর ক্রেতা জোটের সমন্বয়ে ৫ বছরের জন্য অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স গঠিক হয়। তারা ৫ বছর মেয়াদের পরেও থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে পোশাক মালিক জোট বিজিএমইএ বাধ সাজে। সর্বশেষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে সমস্যা সমাধান হয়। সংকটকালীন সময়ে অর্থাৎ জুন-জুলাই মাসে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিলো না বললেই চলে। তবে আগস্ট মাস থেকে সংকট কাটতে শুরু করে। বর্তমানে এই খাতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের উপরে। যদিও ২০২১ সালে এই খাতে ৫০ বিলিয়ন রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ১৫ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। অন্যদিকে দেশ হিসেবে প্রধান রপ্তানির দেশ আমেরিকাতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার মালিক জানান, সংকটের জন্য বিজিএমইএ অনেকটা দায়ি। তারা ঠিকমত পরিচালনা করতে পারলে প্রবৃদ্ধি আরো বেশি হতো। প্রশ্ন তুলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, গত ২ বছরে বিজিএমইএ কয়টা রোড-শো করেছে? অথচ প্রতিযোগী দেশগুলো ক্রেতা দেশগুলো চষে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে বিজিএমইএ শুধু লক্ষ্যমাত্রার বুলি আওড়াচ্ছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের রপ্তানি কমেছে। অথচ ভারত, ভিয়েতনাম প্রবৃদ্ধি করে যাচ্ছে। সরকারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার আমাদের জন্য নতুন বাজার তৈরি করে দিচ্ছে। ব্যবসায়ীক সম্পর্ক সৃষ্টি করছে। আমরা সেটাকে কাজে লাগাতে পারছি না।
বাংলাদেশ রপ্তানি সমিতির (ইএবি) সভাপতি সালাম মূর্শেদী বলেন, রপ্তানি কম হচ্ছে ঠিক আছে। তবে এখানে বিজিএমইএ কি করতে পারে? দেশের পোশাক খাতকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদের থেকে ভালো করার কারণ হলো তাদেরকে প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে দেশিয় মুদ্রার দাম কমানো হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশে ডলারের দাম বিগত ১৫ বছরে প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। এর প্রভাব সার্ভিক রপ্তানিতে পরেছে। একই সাথে ব্যবসায়ীদেরকেও আরো উন্নত হতে হবে। তাদেরকে নতুন পণ্য উদ্ভাবন করতে হবে। সরকার, বিজিএমইএ ও কারখানা মালিকদের যৌথ চেষ্টায় এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্ততকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সংকটের জন্য বিজিএমইএকে দায়ি করা অযৌক্তিক। বরং বর্তমানে যে অগ্রগতি হয়েছে এজন্য বিজিএমইএর ভুমিকা রয়েছে। এ বছর আমেরিকা, কানাডা ও ফ্রান্সে ৩টি ফেয়ার হয়েছে। বিজিএমইএ সেখানে গিয়েছে। আমি নিজেও সেখানে গিয়েছি। দেশের নামি কোনো কোম্পানি সেই ফেয়ারে অংশ নেয়নি। যেগুলো অংশ নিয়েছে তাদের পণ্যের মানও খুব খারাপ। আবার তাদের স্ট্রলগুলো ছিলো অনেক পিছনে। এমনকি তারা মেলা শুরুর দিনও স্টল সাজাতে ব্যর্থ হয়। বিজিএমইএর কাজ হলো সুযোগ তৈরি করে দেয়া। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাজার ধরার দায়িত্ব কিন্তু ব্যবসায়ীদের।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি আছে তা সন্তষজনক। তবে এটা আরো বেশি হতে পারতো। কিছু কারখানার অদক্ষতা ও রপ্তানিতে নানামূখী সমস্যার কারণে প্রায় ৩ শাতংশ কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে আশার কথা হলো ত্রান্তিকাল পার করে এই শিল্প ঘুরে দাঁড়াদে শুরু করেছে। এবছর প্রায় ৩০ বিলিয়ন রপ্তানি হবে বলে মনে করেন তিনি।