সমুদ্র শুধু অকূল অথৈ জলের ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ নয়, এই জলের তলে রয়েছে তেল-গ্যাসসহ মূল্যবান সম্পদের ভাণ্ডার, প্রাণীজ-অপ্রাণীজ ও নবায়নযোগ্য-অনবায়নযোগ্য অজস্র প্রাকৃতিক সম্পদের সমাহার। রয়েছে এর নানাবিধ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক তাত্পর্য। প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তিপূর্বক প্রাপ্ত বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ সমুদ্রাঞ্চল সমৃদ্ধ আগামীর পথে বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল সম্ভাবনার ক্ষেত্র। তবে আমাদের এই এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন (ইইজেড)-এ কী কী ধরনের সম্পদ রয়েছে আমরা যেহেতু তা জানি না; সেক্ষেত্রে শুরুতেই কোন সম্পদ কী পরিমাণে রয়েছে আমাদের তা জানতে হবে, এরপর তার সঠিক আহরণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হবে।
আমাদের বিস্তীর্ণ এই জলসীমায় নবায়নযোগ্য প্রাণীজ সম্পদের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় মাছের কথা। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ৪৭৫ ধরনের মাছ পাওয়া যায় বলে আমরা ধারণা করি, (যদিও এ বিষয়ে এখনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও পূর্ণাঙ্গ জরিপ-ভিত্তিক তথ্য আমাদের হাতে নেই)। বর্তমানে সমুদ্র থেকে প্রায় ৬ লক্ষ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়, যা দেশের মোট উত্পাদনের প্রায় ১৮ শতাংশ। এপর্যন্ত বিক্ষিপ্ত কিছু জরিপে জানা যায়, মাছ ছাড়াও সামুদ্রিক শৈবাল, গুল্মজাতীয় প্রাণী; ৩৫ প্রজাতির চিংড়ি, ৩ প্রজাতির লবস্টার, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া এবং প্রায় ৩০০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক জাতীয় প্রাণী রয়েছে আমাদের সমুদ্র এলাকায়।
নবায়নযোগ্য সম্পদের মধ্যে কম খরচে আমরা টাইডাল (জোয়ারভাটা) এনার্জি বা সামুদ্রিক ঢেউ থেকে বিদ্যুত্ পেতে পারি। সারাবিশ্বে এখন বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত্ উত্পন্ন করা হচ্ছে। আমরাও আমাদের সমুদ্র উপকূলে প্রবাহিত শক্তিশালী বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুত্ উত্পন্ন করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ চীন ও ভারতের কথা উল্লেখ করা যায়। ভারত তার উত্পাদিত ২ লাখ ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ এই বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে উত্পাদন করে, যা আমাদের জাতীয় উত্পাদনের প্রায় ২ গুণেরও বেশি। চীন বায়ুশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ১৫০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করে। একইভাবে সামুদ্রিক স্রোতশক্তিকে এবং সমুদ্রের পানির তাপমাত্রাকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিদ্যুত্ উত্পন্ন করতে পারি।
অন্যদিকে, সমুদ্রের বুকে প্রাপ্ত অনবায়নযোগ্য সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উল্লেখ্য তেল-গ্যাসসহ নানাবিধ খনিজ পদার্থ, যেমন—প্লেসার ডিপোজিট, ফসফরাইট ডিপোজিট, পলিমেটালিক ডিপোজিট, সালফাইড, ম্যাগানিজ নডিউলস ও ক্রাস্ট, গ্যাস হাইড্রেট, এভাপোরাইট ইত্যাদি। আমাদের সমুদ্রসীমায় কী পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে, আমরা তা জানি না। প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ন্যূনতম ১.৭৪ মিলিয়ন টন খনিজ বালুর সমাহার রয়েছে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে। এখানে মোট ১৭ প্রকারের খনিজ বালুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৮টি অর্থনৈতিকভাবে সক্ষমতা রাখে, যেমন—ইলমেনাইট, জিরকন, রুটাইল, ম্যাগনেটাইট, লিউকোক্সিন, কিয়ানাইট, মোনাজাইট। বিশ্বে ব্যবহূত শতকরা ৫০ ভাগের বেশি ম্যাগনেশিয়াম সামুদ্রিক পানি থেকে সংগ্রহ করা হয়। আমরা এই বৃহত্ প্রাকৃতিক উত্স থেকে জীবন রক্ষাকারী নানাবিধ ওষুধ পেতে পারি। এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার কম্পাউন্ড সমুদ্র থেকে পাওয়া গেছে। পরবর্তী প্রজন্মের ওষুধ এই সমুদ্র থেকেই পাওয়া যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের কেবল মাঝারি ধরনের একটি জরিপ জাহাজ রয়েছে যেটা গভীর সমুদ্রে বছরে ৩-৪ মাস জরিপ করার সক্ষমতা রাখে, সেখানে সংশ্লিষ্ট গবেষণাকর্মে নিযুক্ত গবেষকদের স্থান সংকুলানের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের আগামীর দিনের সমুদ্র-নির্ভর অর্থনীতির প্রয়োজনকল্পে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত আরেকটি বড় জরিপ জাহাজ অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রায় পুরোটাই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ঘটে; যেখানে বছরে প্রায় ৩ হাজার জাহাজ আমদানি রপ্তানির কাজে যাতায়াত করে। অথচ বাংলাদেশের বাণিজ্যে ব্যবহূত এতগুলো জাহাজের মধ্যে আমাদের জাহাজসংখ্যা মাত্র ২০-২৫টি, যা বিদেশি জাহাজ ভাড়াবাবদ ব্যয়িত কয়েক হাজার কোটি টাকার সামান্য একটা অংশই কেবল অর্জন করতে পারে। পার্শ্ববর্তী ভারতের সরকার জাহাজশিল্পে শতকরা ১৫ ভাগ নগদ সহায়তা করে থাকে। অথচ এই শিল্পে উজ্জ্বল সম্ভাবনা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার তার তরফ থেকে এখানে কোনো নগদ সহায়তা করছে না। ফলে সম্ভাবনাময় এই খাতটি তার কাঙ্ক্ষিত গতিতে সামনে এগিয়ে যাবার সুযোগ পাচ্ছে না।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের সমুদ্রাঞ্চলভুক্ত একটি স্থানকে মেরিন প্রোটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা দিয়েছে, যা উক্ত অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক হবে। সেইসাথে বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে ভালনারেবল সেন্টমার্টিনসহ আরও কিছু এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান থাকবে। এছাড়া সামুদ্রিক পর্যটন সমৃদ্ধকরণ প্রয়াসের অংশ হিসেবে সার্ফিং, সেইলিং, স্নরকেলিং ও স্কুবাডাইভিং-এর পাশাপাশি সি-ক্রুজ চালু করা যেতে পারে, যেগুলো সরাসরি সুন্দরবন থেকে সেন্টমার্টিন, চিটাগাং থেকে সুন্দরবন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন ইত্যাদি রুট ধরে পর্যটকদের বয়ে নিয়ে যাবে। আর এটা করা হলে বিদ্যমান যাত্রাপথের গ্লানি থেকে পর্যটকেরা যেমন রেহাই পাবে, তেমনি জলপথে গমনাগমন বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন নদীনালা সমুদ্র নিয়ে জনসচেতনতাও বৃদ্ধি পাবে, সর্বোপরি বাংলাদেশের পর্যটনে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে।
সমুদ্রকে ঘিরে বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন তত্পরতায় জাপান সরকার সাগ্রহে এগিয়ে এসেছে। তৈরিপোশাক শিল্পে বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে ৮ থেকে ১০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধানে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাইকা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এই পরিকল্পনায় সংযুক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যেই অভ্যন্তরীণ গ্যাস-নির্ভর বাংলাদেশ ক্রমশ জ্বালানি সংকটে আমদানি-নির্ভর হয়ে পড়ছে এবং সরকার কয়লা ও লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও আমদানিকৃত জ্বালানি সহযোগে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট শক্তি উত্পাদনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর অংশ হিসেবে সরকার চট্টগ্রাম, কক্সবাজার অঞ্চলে ৯ হাজার মেগাওয়াটের কয়েকটি কয়লা বিদ্যুত্ প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাইকার বিগ-বি (বেঙ্গল বে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট) কনসেপ্ট এক্ষেত্রে সবিশেষ উল্লেখ্য। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের কৌশলগত কারণে আমাদের বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব সারা বিশ্বজুড়ে বিদিত। এজন্য বহু বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও ভারতের মতো শক্তিশালী দেশগুলো এই অঞ্চলে তাদের সক্রিয় অবস্থানের ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রয়াস দেখিয়ে যাচ্ছে। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন সহযোগী দেশ এবং সর্বাধিক অর্থ-সহায়তাকারী দেশ জাপান একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ একটি মেগা শিল্পাঞ্চল নির্মাণের প্রস্তাবনা দিয়েছে।
বর্তমান সরকার ইপিজেড উন্নয়ন ধারণা থেকে এসইজেড (স্পেশালাইজড ইকোনমিক জোন) ধারণায় উত্তরণের অংশ হিসেবে সারাদেশে ১০০টি এসইজেড গঠন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা প্রায় ২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার মূল্যের বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে এবং প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যুবশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে সরকার ২০১১ সালে ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি’ হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি, অবকাঠামোর উন্নয়নকল্পে সরকার সড়ক নির্মাণের বৃহত্ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রস্তাবিত বিগ-বি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাতারবাড়ি এসইজেড-সহ চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোট ৩টি এসইজেড নির্মিত হবে। ২০২২ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ধরে জাপানের সহায়তায় সম্প্রতি কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপাঞ্চলের মাতারবাড়িতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসহ ১২০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লা বিদ্যুত্ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়াস হিসেবে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি সমন্বিত শিল্পাঞ্চল গঠন করা হবে। যা পরবর্তী সময়ে জাপান সরকারের সহায়তায় আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সড়ক সংযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে। কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক প্রথমে মায়ানমার এবং তারপর পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে জাপানি কোম্পানিগুলোর একটি আন্তঃসীমান্ত বিনিয়োগ ও সরবরাহ চেইন নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। পরবর্তী সময়ে এই সড়ক চীনের দক্ষিণাঞ্চলের কুনমিং-এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, যা এই অঞ্চলের অর্থাত্ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করবে।
বাংলাদেশ বিগ-বি এবং রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ফর ইকোনোমিক পার্টনারশিপ (আসিয়ানের ১০টি দেশ এবং ভারত, জাপান ও চীনসহ অন্য ৬টি দেশ নিয়ে গঠিত) এরমধ্যে একটি অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সেতু হিসেবে সম্পর্কের আরো উন্নয়ন ঘটাতে পারে। সুলভ শ্রম এবং কম উত্পাদন-ব্যয় বিগ-বি-কে বৈদেশিক বিনিয়োগের একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। অর্থাত্, মাতারবাড়িতে পাওয়ার প্লান্ট ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে বাংলাদেশ জাপানী বিনিয়োগকারীদেরকে এই ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারস্থ এসইজেড-সহ দেশের অন্যান্য এসইজেড-এ বিনিয়োগে আহ্বান করতে পারবে। এভাবে বিগ-বি দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে একটি উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে বর্তমান সরকার এবং ভবিষ্যত্ বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্থনৈতিক নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে, যা আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে শিল্প ও বাণিজ্যে বিশ্বের একটি উন্নত দেশে উন্নীত করবে। উপরন্তু অদূর ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগরের তীর ঘেঁষে (ইন্ডিয়ান ওশান রিম) দেশগুলো অর্থাত্ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত একটি অর্থনৈতিক ব্লক তৈরি হতে যাচ্ছে। এ ব্লকটি আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেটা যদি কার্যকর হয় তাহলে এটা হবে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট। এ প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক ব্লক থেকে বাংলাদেশ নানাভাবে লাভবান হবে।
সমুদ্র থেকে প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদ আহরণ করে এ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে চাই দক্ষ জনবল ও সঠিক পরিকল্পনা। এরই মধ্যে বাংলাদেশের আগামী দিনের অর্থনীতিতে সমুদ্র-অর্থনীতির বিরাট অবদানের সম্ভাবনা থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিএসএমআরএমইউ-তে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ চালু করে সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও সমুদ্র বিষয়ক অধ্যয়নে বড় ধরনের অগ্রগতির সূচনা করেছে। কিন্তু পরিকল্পনা মোতাবেক এ সংক্রান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে নিতে যেমত অবকাঠামো, জরিপ/গবেষণা জাহাজ এবং অন্যান্য কারিগরি সহায়তা দরকার, সেগুলোর যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এ খাতে দরকারমতো দক্ষ জনবল তৈরি করা যাচ্ছে না। ফলে রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন-পূর্বক বাংলাদেশকে উন্নত আয়ের কাতারে উন্নীত করতে যে ডাবল ডিজিট গ্রোথ করতে হবে, এবং সেখানে সমুদ্র-অর্থনীতি থেকে ৪% জিডিপি আসতে হবে—সে লক্ষ্যে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব হচ্ছে না। এখানে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি সরকার সমুদ্র বিষয়ক অধ্যয়নকে/ গবেষণাকে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলার লক্ষ্যে কক্সবাজারের পেঁচার দ্বীপে জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছে। এ ইনস্টিটিউটকে, ভারতের আদলে আর্থ সায়েন্সেস মন্ত্রণালয়, অথবা আর্থ অ্যান্ড ওশান সায়েন্সেস নামে একটি অধিদপ্তর তৈরি করে তার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। একইভাবে, সময়ের দাবি বিবেচনায় স্পারসো এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আর্থ সায়েন্সেস মন্ত্রণালয় অথবা আর্থ অ্যান্ড ওশান সায়েন্সেস অধিদপ্তরের অধিভুক্ত করা যেতে পারে। সরকার নতুন মন্ত্রণালয় খুলতে না চাইলে জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, স্পারসো এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরকে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত করতে পারে। আর তাহলেই আর্থ সায়েন্সেস সম্পর্কিত সকল সংস্থা একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকে কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে। সর্বোপরি, অধিকৃত বিশাল সমুদ্র নিয়ে নতুন আয়তনে উদ্ভাসিত বাংলাদেশ তার জলরাশি জুড়ে ছড়ানো অভাবিত সম্পদ এবং সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে অচিরেই এক সমৃদ্ধ আগামী সম্ভব করে তুলতে পারে। আর সেজন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা, তা বাস্তবায়নে তড়িত্গতি এবং সততা ও দক্ষতা।