পাট পণ্যের চাহিদা বাড়ছে

জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে খাতটি থেকে মোট আয় হয়েছে ৪৫১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১৬ শতাংশ

শুধু দেশেই নয়, বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে বিদেশেও। দেশীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আন্ত্মর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন, গবেষণালব্ধ নতুন আবিষ্কার মাঠপর্যায়ে বাস্ত্মবায়ন ও বৈচিত্র্যময় নতুন পাটপণ্যে বিদেশি ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছে। ফলে রপ্তানি বেড়ে সোনালি আঁশের সুদিন ফিরতে শুরম্ন করছে।
রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরোর (ইপিবি) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে খাতটি থেকে মোট আয় হয়েছে ৪৫১ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার বা তিন হাজার ৬০৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে খাতটি থেকে তিন হাজার ৯৭ কোটি টাকা আয় হয়েছে। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরে সাড়ে ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ে ৫১১ কোটি টাকা বেশি আয় হয়েছে।

বিশেস্নষকরা বলছেন, পরিবেশ নিয়ে বিশ্ব এখন সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। ফলে মানুষের পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা দিন দিন বাড়ছে। আর পরিবেশবান্ধব হওয়ায় পস্নাস্টিক, রাবার বা বিকল্প পণ্যগুলোর তুলনায় পাটপণ্য ব্যবহারে মানুষ আগ্রহী হচ্ছে। এ ছাড়া দেশে পাটশিল্পে নানামুখী গবেষণা ও বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়াচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন পণ্যের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় শপিং ব্যাগ। এ ছাড়া পাটের তৈরি নান্দনিক পণ্যগুলোর মধ্যে ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, শাড়ি, জুতা, ব্যাগ, টেবিল ম্যাটের মতো দরকারি পণ্যের বাজার তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি পাটের তৈরি কাগজ, পাটের ভিজিটিং কার্ড,র্ যাপিং শিট, দাওয়াতপত্র, অফিস আইটেম, ফাইল ফোল্ডার, ব্যাগ, কার্ড হোল্ডার, পেপার ফোল্ডার, ফাইলবক্স, টিসু্যবক্স, ডেস্ক ক্যালেন্ডার, স্কুল ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, লেডিস পার্স, শপিং ব্যাগ, মোবাইল-পাসপোর্ট ব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, গ্রোসারি ব্যাগ, ট্রাভেল ব্যাগ, সু্যটকেস, ব্রিফকেস, মানিব্যাগসহ নোটবুক, ফটো অ্যালবাম, ল্যাম্প শেড ও পুতুলসহ দৃষ্টিনন্দন শোপিসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
জানা গেছে, দেশের একসময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের কদর কমতে থাকে আশির দশকের পর। এশিয়ার সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজী বন্ধ করে দিতে হয়। শীর্ষ রপ্তানিপণ্য হিসেবে পাটের জায়গা দখল করে তৈরি পোশাক। কিন্তু গত কয়েক বছরে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরম্ন করেছে পাট খাত। একসময় বাংলাদেশের পাটের বাজার ছিল ভারত, পাকিস্ত্মান, চীনসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশে।
পাট রপ্তানিকারকদের সংগঠন জুট এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৫টি দেশের বাইরেও কোরিয়া, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভিয়েতনাম, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, নিউজিল্যান্ডসহ বর্তমানে ১২০টিরও বেশি দেশে পাট পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত দীর্ঘ হচ্ছে এ তালিকা।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, এসব দেশে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাংলাদেশ ৯৬২ দশমিক ৪২ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তার প্রেক্ষিতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য এক হাজার ৫৫ মিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এবং জুলাই-নভেম্বর মেয়াদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪০৬ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার। অথচ এই ৫ মাসে তার চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এ গতি অব্যাহত থাকলে বছর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
সংশিস্নষ্টরা বলছেন, রপ্তানির পাশাপাশি দেশের অভ্যন্ত্মরেও পাটের চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাটপণ্যের বহুমুখী উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ানোর উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নানা সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরম্ন হয়েছে। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে স্বল্প দামে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের ব্যাগ তৈরি করছে। এ ছাড়া পাট থেকে ছালা, বস্ত্মা, চট ছাড়াও বর্তমানে দেশে নিজস্ব বিনিয়োগকারীরা ১৫০ ধরনেরও বেশি পণ্য উৎপাদন করছে। সরকারের এই নানামুখী উদ্যোগের ফলে পাটের অভ্যন্ত্মরীণ বাজারের চাহিদার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একই সঙ্গে নানামুখী উদ্যোগের ফলে বিদেশি পাটের চাহিদা বেড়েছে।