কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সরিষাক্ষেতে মধু চাষে দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এতে দুই দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়।
একদিকে মধু বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়, অন্যদিকে ক্ষেতে মৌমাছির খামার থাকলে সরিষার ফলনও ভালো হয়। এ কারণে কৃষি বিভাগ নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সরিষাক্ষেতে মৌমাছির খামার তৈরিতে উৎসাহী করে তুলেছে। কৃষি অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কোনো দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে রৌমারী থেকেই ৪০ টন মধু পাওয়া যাবে। যার বর্তমান বাজারদর ২০ কোটি টাকারও বেশি।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রতিবছরই রৌমারীতে প্রচুর সরিষা আবাদ হয়। সরিষাক্ষেতে মধু চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকলেও এ বিষয়টি আগে জানত না এখানকার কৃষকরা। আমরাই কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে তাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছি। তা ছাড়া সরিষাক্ষেতে মৌমাছির খামার থাকলে স্বাভাবিক যে ফলন হয় তার চেয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ফলন বাড়ে। সরিষার ফুলে মৌমাছি যে পরাগায়ণ ঘটায় তাতে সরিষার দানা ভালো হয় এবং ফলনও বাড়ে।
’ কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেতে মৌমাছির বাক্স বসানো হয়েছে। দুই হাজারের ওপরে বাক্স রয়েছে। প্রতিটি বাক্স থেকে গড়ে ২০ কেজি করে মধু পাওয়া যাবে। সে হিসাবে ৪০ টন মধু আসবে। বর্তমান বাজারে প্রতি লিটার মধু ৫০০ টাকা করে বিক্রি করা যায়। এতে চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ কোটি টাকা আয় হবে মধু থেকে।
সরেজমিনে মধু খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুঁজির অভাব, আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এবং সুষ্ঠু বিপণন ব্যবস্থা না থাকায় খামারিরা সমস্যায় পড়ছে। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটা হলো পুঁজি। ফরহাদ হোসেন নামের এক খামারি বলেন, ‘ক্ষেতে খামার গড়ে তুলতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়; কিন্তু আমাদের হাতে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় বড় আকারের খামার করতে পারছি না। সরকারিভাবে খামারিদের অর্থ জোগান দিলে আরো বেশি মধু বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। ’
খামারিদের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতিটি বাক্সে ৯-১০টি করে মোমের ফ্রেম থাকে। ফ্রেমে পুরুষ মাছি মধু জমা করে আর রানি মাছি ডিম দেয়। ফ্রেমগুলো মধুতে ভরে যাওয়ার পর বাক্স থেকে ফ্রেমগুলো খুলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাছিমুক্ত করে মধু আলাদা করা হয়। সরিষাক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে, সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌমাছির বাক্স। হাজার হাজার মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে বাক্সে জমা করছে। সাত-আট দিন পর পর ওই সব বাক্স থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিটি বাক্সে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পুরুষ মৌমাছি আর একটিমাত্র রানি মৌমাছি থাকে। আবু তাহের নামের এক খামারি বলেন, এই মৌমাছির নাম এফিস মিলি ফেরা। সারাদিন মাছিগুলো সরিষার ফুলে পরাগায়ণ ঘটায় এবং মধু সংগ্রহ করে। প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের সরিষাক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করতে পারে মৌমাছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মধু মধুই। তবু ফুলের ওপর নির্ভর করে মধুর ভিন্নতা। সরিষার ফুল থেকে যে মধু পাওয়া যায় তার দাম একটু কম। সুন্দরবনের মধুর দাম একটু বেশি। এখানে প্রতিবছর যে পরিমাণ সরিষার আবাদ হয় তাতে মধু চাষে অর্থনৈতিক দিক থেকে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এই সম্ভাবনাটাকে কাজে লাগানোর জন্য খামারি ও সরিষা চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছি। এ বছর ৪০ হাজার লিটার মধু পাওয়ার আশা করছি। ’