দেশের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে তৈরি হচ্ছে পাঁচটি ভাসমান জাহাজ। গত রবিবার মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ইস্পাহানিয়ার চরে এ পাঁচটি জাহাজের আনুষ্ঠানিক নির্মাণ উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ রকম কোনো পূর্ণাঙ্গ জাহাজ তৈরি হচ্ছে, যা ভাসমান হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এই ভাসমান হাসপাতাল জাহাজগুলো পরিচালনা করবে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ। এই কাজে ফ্রেন্ডশিপকে সহায়তা করছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)। নারায়ণগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড শিপ বিল্ডিং লিমিটেড জাহাজ পাঁচটি তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছে।
কিল লেয়িং (নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মো. আবদুল বাকি, যুগ্ম সচিব, ইআরডি, অর্থ মন্ত্রণালয়; বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. নিজাদ এম সুবেই, পরিচালক, ফাযলে খায়রে প্রগ্রাম, আইডিবি এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রুনা খান, প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, ফ্রেন্ডশিপ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড শিপ বিল্ডিং লিমিটেডের এমডি শাহ আব্দুল লতিফ, এনআরবি ব্যাংকের ডিএমডি সাহাবুদ্দিন আহমেদ।
ফ্রেন্ডশিপ আগামী পাঁচ বছর প্রান্তিক ও অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসাসেবা দেবে এই জাহাজগুলো ব্যবহার করে। প্রথমে উত্তরবঙ্গ দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে দক্ষিণ অঞ্চলে এই স্বাস্থ্যসেবা ছড়িয়ে দেবে ফ্রেন্ডশিপ।
জাহাজের কিল লেয়িং উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একটি জাহাজ নির্মাণের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
এই পাঁচটি জাহাজ শুরু থেকে ফ্লোটিং হাসপাতাল হতে ডিজাইন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ রকম ঘটনা এটাই প্রথম, যা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি এবং দেশীয় প্রকৌশলী দ্বারা তৈরি হচ্ছে। এদের মধ্যে চারটি ভাসমান জাহাজ দৈর্ঘ্যে ২৫ মিটার এবং একটি ৩১ মিটার। প্রতিটি ভাসমান জাহাজ হাসপাতালে থাকবে সব আধুনিক সুবিধাসহ অপারেশন থিয়েটার, ডাক্তার চেম্বার এবং অন্যান্য চিকিৎসা সুবিধা। চারটি ডেক থাকবে প্রতিটি জাহাজে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে প্রথম দুটি জাহাজ সরবরাহ করা হবে। বাকি তিনটি জাহাজ সরবরাহ করা হবে ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে।
রুনা খান বলেন, ‘যখন কোনো মানুষ অসুস্থ থাকে তখন অন্য কোনো উন্নয়ন প্রকল্প তার কাছে কোনো অর্থ বহন করে না। আমি আশা করি, এই পাঁচটি ভাসমান জাহাজ হাসপাতাল সেসব লাখো মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। যারা এই হাসপাতাল না থাকলে অন্য কোনো স্বাস্থ্যসেবাই পেত না। ’
প্রান্তিক ও চরাঞ্চলের মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা আরো সহজলভ্য করাই ‘ফ্রেন্ডশিপ’-এর কাজ। ১৯৯৪ সালে একটি বার্জ ফ্রান্স থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে। ফ্রান্স সরকার বাংলাদেশের জনগণের ব্যবহারের জন্য সেটি উপহার হিসেবে দিয়েছিল। ২০০২ সালে রুনা খানের উদ্যোগে বার্জটি ফ্রেন্ডশিপের প্রথম ভাসমান হাসপাতালে রূপান্তর করা হয়।