বিদ্যুৎ সরবরাহে শক্তিশালী সঞ্চালন লাইন হচ্ছে

৩০৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে

মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহে শক্তিশালী সঞ্চালন লাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে নতুন এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভবিষ্যতে নির্মিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশন (সঞ্চালন) করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য ৩০৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। আগামী ২১ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য মোস্তফা কামাল উদ্দীন। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেড। অনুষ্ঠিতব্য পিইসি সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটির বছরভিত্তিক ব্যয় পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে সরকারি তহবিল থেকে ১২৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ কোটি ৭২ লাখ ৬৯ হাজার টাকাসহ মোট ১৩৬ কোটি ৩১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদ্যুৎ বিভাগের আওতায় থোক হিসেবে ১শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু এখন এ খাতে অবশিষ্ট রয়েছে ৮ কোটি টাকা। এ অবস্থায় ১৩৬ কোটি টাকার সংস্থান কিভাবে হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। এত টাকা কোথা থেকে আসবে, তা জানাতে বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০২১ সালের মধ্যে দেশব্যাপী উন্নত পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক নির্মাণের মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান ২০১৬ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এবং ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের জন্য পিজিসিবি লিমিটেড জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের উন্নয়নে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মাধ্যমে দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে মিরসরাই এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের কাজ চলছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা ত্বরান্বিত হবে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পিজিসিবি ২৩০/৩৩ কেভি জিআইএস গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মিরসরাইয়ের এ উপকেন্দ্র বিএসআরএম ২৩০ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্রের সঙ্গে ৪শ’ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। ভবিষ্যতে মিরসরাই উপকেন্দ্রকে ৪শ’ কেভি উপকেন্দ্রে উন্নীত করে আসন্ন করেরহাট ৪০০/২৩০/১৩২ কেভি (ভবিষ্যৎ পাওয়ার হাব) উপকেন্দ্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। মিরসরাই উপকেন্দ্রের মাধ্যমে পার্শ^বর্তী এলাকায় ভবিষ্যতে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ইভাকুয়েশন করা সম্ভব হবে, যার মাধ্যমে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ, লোডশেডিং কমানো এবং দেশের সব মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত ১৬ মার্চ মুখ্য সমন্বয়কের (এসডিজি) সভাপতিত্বে বেজা, পিপিপি কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পিডিবি ও আরপিসিএল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে তাদের ১৫০ মেগাওয়াটের এইচএফও পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ইভাকুয়েশন করার প্রয়োজন হবে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ‘মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে সঞ্চালন অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ১৭ কিলোমিটার মিরসরাই-বিএসআরএম ৪শ’ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন নির্মাণ, মিরসরাই ২৩০/৩৩ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র নির্মাণ এবং বিদ্যমান দুটি বিএসআরএম ২৩০ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্রে ২৩০ কেভি জিআইএস বে-সম্প্রসারণ করা হবে।