দেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করল বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। গত অর্থবছরে তাদের জন্য নির্ধারিত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৬২০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে বছর শেষে ৬৫৪ দশমিক ৯৪ কোটি ডলার অর্জন করেছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫.৬৪ শতাংশ বেশি, যা দেশের মোট জাতীয় রপ্তানির ১৮.৮৯ শতাংশ। একই সঙ্গে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানেও লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি।
বেপজার জনসংযোগ বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, বেপজা এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মধ্যে সম্পাদিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুসারে ৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ, রপ্তানি আয় ৬২০ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২৫ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কিন্তু অর্থবছর শেষে বিনিয়োগ, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গত অর্থবছরে বেপজা বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে ৩৪ দশমিক ৩৭ কোটি ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ৩৭ কোটি ডলার বেশি। আশার কথা হচ্ছে, এই বিনিয়োগের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এসেছে পিছিয়ে থাকা মোংলা, ঈশ্বরদী এবং উত্তরা ইপিজেডে। এ ছাড়া ৮টি ইপিজেডের চালু ৪৫৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে রপ্তানি হয়েছে ৬৫৪ দশমিক ৯৪ কোটি মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৩ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা (১ ডলার ৮১ টাকা ৫০ পয়সা হিসেবে)। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় রপ্তানির (৩৪৫৬ দশমিক ৫৯ কোটি ডলার। ) ১৮.৮৯ শতাংশ।
এ সময় দেশের ৮টি ইপিজেডে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ২৬ হাজার ৬৩৮ জন বাংলাদেশি নাগরিকের। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রসঙ্গে বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় গত বছর আমাদের মনে হয়েছিল বিশ্ববাজার কিছুটা মন্দা যাবে। তা ছাড়া কমপ্লাইয়েন্স এবং ট্রেড ইউনিয়ন নিয়েও কিছুটা চাপ ছিল। তাই আমরা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণেও সতর্ক ছিলাম। তবে আমাদের বিনিয়োগকারী এবং বেপজায় কর্মরত শ্রমিকদের কর্মোদ্যম লক্ষ্য অর্জনে সাফল্য এনে দিয়েছে। ’
তবে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না হলেও চলতি অর্থবছরে বেপজার রপ্তানি ও বিনিয়োগ আরো বেশি ইতিবাচক হবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘পাইপলাইনে বাস্তবায়ন পর্যায়ে আছে ১২৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অন্তত ৫ থেকে ১০টি এ অর্থবছরেই উৎপাদনে আসবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া কমপ্লাইয়েন্সগত কারণে গত অর্থবছরে পুরোপুরি কিংবা আংশিক বন্ধ থাকা বেশ কিছু কারখানা এ বছরে পুরোদমে উৎপাদনে আসবে। ফলে এ অর্থবছরে রপ্তানিতে আরো তেজিভাব আশা করছি। ’
প্রসঙ্গত, জুন ২০১৭ পর্যন্ত বেপজায় ৩৪টি দেশের ৪৬৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু এবং ১২৭টি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। দেশের ৮টি ইপিজেডে কর্মরত ৪ লাখ ৭৯ হাজার ১৮১ জন বাংলাদেশি নাগরিক বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড পণ্য উৎপাদন করছে।