কমলা চাষে ভাগ্য পরিবর্তন

পাহাড়ে কমলা বাগান করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন রাঙ্গামাটির নানিয়াচর উপজেলার সাবেক্ষ্যং ইউনিয়নের নম কার্বারীপাড়া গ্রামের মধুসুধন তালুকদার। দুর্গম এলাকা ছেড়ে তিনি এখন বসবাস করছেন নানিয়াচর উপজেলা শহরে। কমলার বাগান দেখতে মাঝে মাঝে শহর থেকে গ্রামে যাচ্ছেন এখন।
মঙ্গলবার সাবেক্ষ্যংয়ের নম কার্বারীপাড়ায় মধুর কমলা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কমলার ভারে নুয়ে পড়েছে কমলাগাছের ডালপালা। ভাঙন রোধে প্রতিটি ডালে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেস দেয়া হয়েছে। কমলাগুলো এ বছর আকারে বড় এবং স্বাদেও মিষ্টি হয়েছে- জানালেন মধুসুধন।
মধু বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে কমলার চাহিদা দেয়া হচ্ছে। গত বছর তিনি পাইকারি বিক্রি করলেও এ বছর নিজে কমলাগুলো বাজারজাত করবেন। এবার ১০-১২ লাখ টাকার কমলা বিক্রি হবে বলে আশা তার।
গত বছর পেয়েছেন প্রায় ৭ লাখ টাকা। এ বছর চলতি নভেম্বরে মাসের শেষের দিকে পুরোদমে বিক্রি শুরু করবেন। ইতোমধ্যে প্রতিটি ৩৫ টাকা করে ৩ হাজার কমলার দাম অগ্রিম নিয়েছেন।
মধু বলেন, দুর্গমতার কারণে সাবেক্ষ্যং এলাকায় কলা, কাঁঠাল, জাম্বুরা উৎপাদন হলে বাজারজাতের সুবিধা না থাকায় দাম পাওয়া যায় না। কমলা একসঙ্গে অনেক বাজারে নেয়া যায়। দামও অন্যান্য ফলের চেয়ে বেশি।
এটি মাথায় রেখে ২০০৭ সালে ২ একর পাহাড়ে ৭শ’ কমলার চারা লাগান। ২০১৪ সাল থেকে তিনি কমলা বিক্রি করেন।
মধু বলেন, তার কোনো সমতল জমি নেই। ৭ একর পাহাড়ি জমি আছে। এর মধ্যে ২ একর কমলা বাগান এবং ৫ একর সেগুন বাগান করেছেন। ২০০৫ সালের আগেও তিনি বিভিন্ন এলাকায় অন্যের বাসাবাড়ি নির্মাণ করে দিতেন। এলাকায় অধিকাংশ ঘর তার হাতের করা।
মধু বলেন, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে তিনি প্রথম লাখ টাকা গুনেছেন কমলা বিক্রি করে। এরপর এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। পরে নানিয়াচর সদরের টিঅ্যান্ডটি এলাকা বাড়িসহ জমি ক্রয় করে স্ত্রী ও এক কন্যা, এক পুত্র নিয়ে বসবাস করছেন। নম কার্বারীপাড়ায় তার ঘর থাকলেও সেটি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।
মধু বলেন, আমি কমলার টাকা যথাযথ ব্যবহার করেছি। ছেলে ফার্মেসি ডিপ্লোমা শেষ করেছে। মেয়ে সামনে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এখন আমার আপাতত টাকার জন্য চিন্তা করতে হয় না। এর আগে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি। যা এলাকার মানুষ জানে। কষ্টের সুফল আজ আমি পাচ্ছি।
এলাকার বাত্তোমনি চাকমা (৩৩) বলেন, মধুর ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে আমাদের চোখের সামনে। আগে তিনি যে পরিশ্রম করেছেন তা আমরা দেখেছি। সে এখন এলাকায় সুখী মানুষ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মধু বলেন, কমলার ক্ষতিকারক পোকা মারতে এক সময় তিনি রাতে বাগানে পড়ে থাকতেন। এখন বাগান দেখাশোনা করতে ৩ জন লোক রেখেছেন। তারা বাগান দেখাশোনা করেন। তাদের সঙ্গে তিনি বাগান পরিচর্যার বাস্তব অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন। তার এ সফলতা দেখে এলাকায় অনেকে এখন কমলার বাগান করছেন। তিনি অন্যদের বাগান করতে উৎসাহিত করেন।
নানিয়াচর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ জয় চাকমা বলেন, নানিয়াচরের কমলা চাষিদের মধ্যে সফল একজন কমলা চাষি মধুসুধন। তার বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পাশাপাশি কৃষি অফিসের পরামর্শ গ্রহণ করেন। আগ্রহীরা কমলা চাষ করে যেন লাভবান হতে পারেন সে জন্য চাষিদের নিয়মিত কৃষি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানা প্রদীপ জয়।
জেলা কৃষি তথ্যমতে, রাঙ্গামাটি জেলায় কমলার চাষ হয় ৭৪৫ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৬০৩ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, সফল কমলা চাষি মধুর খবর আমরা রেখে তাকে কৃষি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। নানিয়াচরের মাটি কমলা চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলায় ৭০ হেক্টর জমিতে কমলা বাগান আছে। নানিয়াচরে কমলার চাষ বাড়লেও জেলার অন্যান্য এলাকায় কমলার চাষ কমছে বলেন পবন। কমলা চাষে বেশি পরিচর্যা প্রয়োজন হওয়ায় চাষিরা কমলা চাষে আগ্রহী নন বলে এ চাষ কমে যাচ্ছে। আগে সাজেকে কমলা চাষ হলেও এখন তা কমেছে।