ঝিনাইদহে তৈরি গরুর গাড়ির চাকার রয়েছে দেশব্যাপী কদর। চাকা তৈরির বৃহত্তম জেলা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে এ জেলার। বেশকিছু জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাকা কিনতে এখানে আসেন। গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করে শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে।
গরুর গাড়ির অন্যতম উপকরণ কাঠের তৈরি চাকা। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে দিন-রাত পরিশ্রম করে চলেছেন কারিগররা।
সদর উপজেলার আমতলী বাজার, হাটখোলা, মহেশপুর, কোটচাঁদপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থান, শৈলকুপার ভাটই বাজার, গাড়াগঞ্জ বাজার, খুলুমবাড়ি, কুমিড়াদহ ও আবাইপুর বাজারে গড়ে উঠেছে চাকা তৈরির কারখানা। বিভিন্ন এলাকার কৃষক ও গৃহস্থ গরুর গাড়ির চাকার জন্য ছুটে আসেন এসব অঞ্চলে। এর মধ্যে গাড়াগঞ্জ বাজারে বেশি চাকা তৈরি হয়।
গাড়াগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রধান সড়কের দুই ধারে সামান্য জায়গার ওপর গড়ে উঠেছে আটটি চাকা তৈরির কারখানা। কারিগরসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি কর্মরত এখানে। বংশানুক্রমে দীর্ঘদিন ধরে পেশাটিকে আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন তারা।
গাড়াগঞ্জ বাজারের চাকা তৈরির কারিগর আনছার আলী জানান, বাপ-দাদারাও চাকা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাবার কাছেই এ পেশায় হাতেখড়ি তার। পিতা-পুত্র একসঙ্গে বাড়িতে চাকা তৈরি করতেন। কাজের খোঁজে প্রায় ২৫ বছর আগে গাড়াগঞ্জ এলাকায় আসেন তিনি। একটি চাকা তৈরিতে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার কাঠ লাগে। শ্রমিকের মজুরি ৫০০ টাকা। বিক্রি হয় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। কোনো যান্ত্রিক যন্ত্রপাতি নয়, শুধু হাতুড়ি, বাটাল ও করাত দিয়ে তৈরি করা হয় চাকা। একজন কারিগর একদিনে একটি চাকা তৈরি করতে পারেন।
কারিগর ফিরোজ হোসেন জানান, বাবলা গাছের কাঠই এ চাকা তৈরির একমাত্র উপাদান।
চাকা তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক সময় পুঁজির অভাবে অধিক দামে বাকিতে গাছ কিনতে হয়। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতাসহ ব্যাংকঋণের সুবিধা পেলে উপকৃত হতেন কারিগররা।