হাঁস পালনে স্বাবলম্বী

পাবনার এক গ্রামের দরিদ্র কৃষক আবদুুর রাজ্জাক হাঁস পালন করে এখন স্বাবলম্বী। কিছুদিন আগেও তার পরিবারে অভাব অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী। হাঁস পালনে পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা, মুক্তি পেয়েছেন তিনি আর্থিক দৈন্যতা থেকে। আবদুর রাজ্জাকের বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘলবাড়ি কৈ গ্রামে। মাত্র ২২ হাজার টাকার পুঁজির ব্যবসায় তিনি এখন প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় করছেন।

সোমবার আবদুর রাজ্জাক জানান, প্রথমে তিনি কয়েকটা হাঁসের বাচ্চা কিনে খামার শুরু করেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মহাশৈল গ্রামের শাহীনের হ্যাচারি থেকে ৩০ টাকা করে ২২ হাজার ৫০০ টাকায় ৭৫০টি ক্যাম্বল জাতের হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করেন। এরপর অল্প পুঁজিতে তার ব্যাপক মুনাফা আসতে শুরু করে। তখন তিনি চিন্তা করেন হাঁসের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। ২০১৬ সালে তিনি ৪০০ হাঁস পালন করে প্রতি মাসে খরচ বাদে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। ডিম দেয়ার পর পরিণত বয়স্ক হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন। লাভজনক হওয়ায় শক্তভাবে মনোনিবেশ করেন হাঁস চাষে। এ বছর তিনি তার খামারে পালন করছেন ৭৫০টি হাঁস। স্বপ্ন দেখছেন সুদিনের। আবদুর রাজ্জাক আরও জানান, পাঁচ শতক বসতভিটা ছাড়া অন্য কোনো জায়গাজমি নেই তার। কয়েক বছর আগে অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। পুকুরের লিজের মেয়াদ শেষ হলে ছয় বছর ধরে হাঁস পালন করছেন। তার স্ত্রী জাহানারা খাতুন ও ছেলে সুলতান সার্বক্ষণিকভাবে সহায়তা করে তাকে। এ ছাড়া মাসে ৯ হাজার টাকা বেতনে সেলিম নামে এক শ্রমিক কাজ করেন তার খামারে। হাঁসগুলোর বয়স এখন পাঁচ মাস। হাঁসকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন বিলে জাল ফেলে শামুক ধরেন। এছাড়া প্রতিদিন এক মণ গম খাওয়ান হাঁসকে, যার দাম প্রায় ১১শ’ টাকা। চারজনের শ্রমের মূল্য ১ হাজার ২০০ টাকা হিসাবে তার প্রতিদিন খরচ আসছে ২ হাজার ৩০০ টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, হাঁসগুলো পূর্ণ বয়স্ক হলে শতকরা ৮০টি ডিম দিলে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ করে ডিম পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার ২০০ টাকা। তখন তিনি প্রতি মাসে প্রায় সোয়া লাখ টাকার ডিম বিক্রি করতে পারবেন। তার স্ত্রী জানান, ছেলে, বৌমা ও নাতিসহ সবাই হাঁসের খামারে শ্রম দেন। ভোরে ঘুম থেকে উঠে খামার পরিষ্কার করে নৌকা থেকে শামুক নামিয়ে হাঁসগুলোকে খেতে দিতে হয়।
ব্র্যাক থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শামুক ধরার জন্য বড় একটা নৌকা এবং বাদাই জাল কিনেছেন। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কয়েকটি হাঁস ডিম দেয়া শুরু করেছে। আশা করছেন আগামী মাস খানেকের মধ্যে শতকরা ৮০টি হাঁস ডিম দেবে। এখন বিলে পানি আছে, বাড়ির কাছেই হাঁস রাখছেন। শুষ্ক মৌসুমে হাঁস নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। সে সময় বাড়ি ছেড়ে হাঁস নিয়ে দূর-দূরান্তে যেতে হয়। রাতে নিরাপদে হাঁস রাখার জন্য চাটমোহর মান্নান নগর সড়কের পাশে ৪ শতক জায়গা লিজ নিয়েছেন। এর জন্য বছরে ২ হাজার ৫০০ টাকা জমির মালিককে দিতে হয়। আলোর জন্য সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করেছেন। বাড়ির সবাই পরিশ্রম করছেন সুখের আশায়, সুদিনের মুখও দেখতে পারছেন, খামারটা বড় করার জন্য কিছু জমি ক্রয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে।
চাটমোহর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. স্বপন চন্দ্র দেবনাথ জানান, আবদুর রাজ্জাকেরসহ উপজেলায় মোট ৫৪ হাঁসের খামার রয়েছে। এছাড়াও অনেকে বাড়িতে হাঁস পালন করে। তবে আবদুর রাজ্জাক পরিশ্রম করে সফলতা পেয়েছে। হাঁস পালন একটি লাভজনক ব্যবসা, বেকার নারী-পুরুষরা এক্ষেত্রে এগিয়ে এলে সরকার সব ধরনের সহায়তা করবে।