দেশের ১০ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে ৩৩ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ফলে এসব জমি থেকে বছরে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে ১ লাখ ৪২ হাজার ১৭৭ টন। এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন পানির পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা। এজন্য দুটি পৃথক প্রকল্প হাতে নিচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (এককে) বৈঠকে উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পগুলো। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের এ উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। কেননা ভূ-গর্ভস্থ পানি অতিমাত্রায় সেচের কাজে ব্যবহারের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এরই মধ্যে উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যদি এভাবে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমানো না হয়, তাহলে দেশের অনেক স্থানই মরুভূমি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, ‘বৃহত্তর খুলনা ও যশোর জেলা ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে এটি বাস্তবয়িত হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে খাল পুনঃখনন এবং সেচ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় ১২ হাজার ৬৬৪ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। এতে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৫০ হাজার ৬৫৬ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
যেসব উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে সেগুলো হচ্ছে- যশোর জেলার সদর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা, কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলায়। এছাড়া মাগুরা জেলার সদর, শালিখা, মহম্মদপুর ও শ্রীপুর উপজেলায়। নড়াইল জেলার সদর, লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায়। ঝিনাইদহ জেলার সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, শৈলকুপা ও হরিণাকুণ্ড উপজেলা। খুলনা জেলার সদর, রূপসা, বটিয়াঘাটা, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, তেরখাদা, দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা। সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলারোয়া, তালা, কালীগঞ্জ, দেবহাটা, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা। বাগেরহাট জেলার সদর, কচুয়া, রামপাল, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, মোংলা, মোরেলগঞ্জ এবং শরণখোলা উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে- ৩০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন, ২৭০টি পানি সংরক্ষণ অবকাঠামো নির্মাণ, ২০০টি বিদ্যুৎ চালিত লো-লিফট পাম্প স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ চালিত ৫টি লো-লিফট পাম্প স্থাপন, ৪০টি ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালা সম্প্রসারণ, ৪০টি ভূ-উপরিস্থ সেচ নালাকে ভূ-গর্ভস্থ সেচ নালায় রূপান্তর এবং ৪টি অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে।
এদিকে ‘নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানির পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে ২০ হাজার ৩৩৮ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। ফলে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৯১ হাজার ৫২১ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে যেসব উপজেলায় সেগুলো হচ্ছে- নোয়াখালী জেলার সদর, বেগমগঞ্জ, চাটখিল, কোম্পানিগঞ্জ, হাতিয়া, সেনবাগ, সোনাইমুরি, সুবর্ণচর এবং কবিরহাট উপজেলা। ফেনী জেলার সদর, দাগনভূঞা, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজি এবং সোনাগাজী উপজেলা এবং লক্ষ্মীপুর জেলার সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি এবং কমলগঞ্জ উপজেলায়।