চাঁদপুরে ভাসমান বেডে শীতের আগাম সবজি চাষ

চাঁদপুর জেলার ৩টি উপজেলায় ভাসমান বেডে শীতের আগাম সবজি চাষ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কৃষক ও কৃষি বিভাগের নিরলস প্রচেষ্টায় ভাসমান বেডে সবজি চাষের পাশাপাশি এবার আমন ধানের চারা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। বন্যার আশঙ্কা মাথায় রেখে জেলার ৯৩টি বেডে আমন ধানের (বীজতলা পদ্বতি) চারা উৎপাদন করা। উৎপাদিত চারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে রোপন করা হয়েছে। এ কারনে এবার রোপা আমন মৌসুমে চাঁদপুরে চারার ঘাটতি হয়নি। সবজি চাষের পাশাপাশি আমন ধানের চারা উৎপাদনে সাফল্য আসায় স¤প্রতি ল²ীপুর জেলার সদর উপজেলা, রায়পুর, রামগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার একটি কৃষক প্রতিনিধিদল উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণে আসেন। তারা চাঁদপুরে ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদন চাষ পদ্ধতি স্বচক্ষে অবলোকন করেন।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলার ৮টি উপজেলায় কম-বেশি ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদন হয়। বিশেষ করে ৩টি উপজেলা ফরিদগঞ্জ, হাজীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় উল্লেখযোগ্যহারে চাষাবাদ হয়। এবার ৩৭৫ হেক্টরে ভাসমান বেডে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ২০৬০ মেট্টিক টন সবজি উৎপাদন হবে বলে কৃষি বিভাগের দাবি। ভাসমান বেডে বিশেষ করে কুমড়া, লাউ, সিম, লাল শাক, ধনিয়া পাতা, ডাটাসহ বিভিন্ন প্রকারের সবজি চাষ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরো জানায়, ২০১৫ সালের শেষদিকে গৃহীত ৩ বছর মেয়াদী একটি প্রকল্পে চাঁদপুর ৮০০টি ভাসমান বেড তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত দু’বছরে ৭৫৮টি ভাসমান বেড তৈরী করা সম্ভব হয়েছে।
৩০ বছর আগে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার শোভান গ্রামের সহিদ তালুকদার (৪৫) এ পদ্ধতিতে প্রথম সবজি চাষ শুরু করলেও এখন গ্রামের শত শত কৃষক তা করছেন। জেলা ছাড়াও আশপাশের অনেক জেলা থেকেও কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণার্থী এবং চাষিরা এসব ভাসমান সবজি চাষ বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করেন।
কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার মাধ্যমে ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি ও মসলা চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষক নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করছে। কিছু এলাকা বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এবং বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার অধিকাংশ নিচু জমি পানির নিচে চলে যায়। তখন কৃষকের তেমন কাজ থাকে না। বর্ষার ভরা মৌসুমে যখন শাক সবজির আকাল থাকে, তখন এ চাষাবাদে কৃষক পরিবার নিজেদের কর্ম সৃষ্টি ও বিষমুক্ত উৎপাদিত সবজি বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকার ভাটি অঞ্চল খ্যাত চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের অধিকাংশ এলাকা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকায় সেখানে অধিকহারে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এ ধরনের চাষাবাদে রাসায়নিক সার ব্যবহার না হওয়ায় বিষমুক্ত সবজি উৎপাদিত হয়। বর্তমানে হাজীগঞ্জে ভাসমান বেডে সবজি চাষ প্রকল্পের আওতায় ২০টি গ্রামে ব্যাপকভাবে মসলা ও সবজি চাষ করা হয়েছে। উপজেলায় প্রায় ৬শ’ কৃষক ১৫/২০ ফুট দৈঘ্যের সহস্রাধিক বেড তৈরি করেন। এ বেডগুলোতে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, কলমী শাক, লাল শাক, শসা, ডাটা শাক ও ধনিয়া পাতা আবাদ করা হয়েছে। হাজীগঞ্জে এবার দুই শতাধিক হেক্টর জমিতে ভাসমান বেড পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হয়েছে।
কৃষক মোঃ আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে কচুরিপানা স্তুপ করে সবজি চাষ করে আসছি। বর্তমানে কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছি। আগের তুলনায় এখন বেশি লাভবান হচ্ছি।
চাঁদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলী আহমেদ জানান, ভাসমান বেডে সবজি চাষে কৃষকদের জন্যে সহায়তা এবং পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে। ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি। এ কারনে বাজারে ঐসব সবজি চড়া দামে বিক্রি হয়। এখানকার কৃষক ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি ও আমন ধানের বীজতলা তৈরীতে খুবই পারদর্শী।