হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। কিছু দিন আগেও তাদের পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী ছিল। এখন তার পরিবার সচ্ছলতায় আর্থিক দৈন্যতা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
উপজেলার হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘলবাড়ি কৈ গ্রামে গিয়ে কথা হয় হাঁসের খামারি আব্দুর রাজ্জাকের সাথে। তিনি জানান, এই খামার করার শুরম্নতে তিনি কয়েকটি হাঁসের বাচ্চা কিনে শুরম্ন করেন। এরপর তিনি দেখতে পান অল্প পুঁজিতে তার ব্যাপক মুনাফা আসতে শুরম্ন করেছে। তখন তিনি চিন্ত্মা করেন হাঁসের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। গত বছর তিনি চারশত হাঁস পালন করে প্রতি মাসে খরচ বাদে অন্ত্মত ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। ডিম দেয়ার পর পরিণত বয়ষ্ক হাঁসগুলো বিক্রি করে দেন তিনি। মনোনিবেশ করেন শক্তভাবে হাঁস পালন। এ বছর তিনি তার খামারে পালন করছেন সাড়ে সাতশো হাঁস। স্বপ্ন দেখছেন সুদিনের।
আব্দুর রাজ্জাক আরো জানান, পাঁচ শতক বসতভিটা ছাড়া অন্য কোনো জায়গা জমি নেই তার। কয়েক বছর আগে অন্যের পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। পুকুরের লিজের মেয়াদ শেষ হলে ছয় বছর ধরে হাঁস পালন করছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসে তাড়াশের মহাশৈল গ্রামের শাহীনের হ্যাচারী থেকে ৩০ টাকা করে ২২ হাজার ৫শ’ টাকায় ৭৫০টি ক্যাম্বল জাতের হাঁসের বাচ্চা কেনেন তিনি। স্ত্রী জাহানারা খাতুন ও ছেলে সুলতান সার্বক্ষণিকভাবে সহায়তা করেন তাকে। এ ছাড়া মাসে নয় হাজার টাকা বেতনে সেলিম নামের এক শ্রমিক কাজ করেন তার খামারে। হাঁসগুলোর বয়স এখন পাঁচ মাস। ক্ষতিকর জেনেও হাঁসকে খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন বিলে জাল ফেলে শামুক ধরেন। এ ছাড়া প্রতিদিন এক মণ গম খাওয়ান হাঁসকে, যার দাম প্রায় এগারো শত টাকা। চার জনের শ্রমের মূল্য এক হাজার দুইশ’ টাকা হিসাবে তার প্রতিদিন খরচ আসছে দুই হাজার তিনশ’ টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন হাঁসগুলো পূর্ণ বয়ষ্ক হলে শতকরা ৮০টি ডিম দিলে প্রতিদিন প্রায় ৬শ’টি করে ডিম পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ হাজার ২শ’ টাকা। তখন তিনি প্রতি মাসে প্রায় সোয়া লাখ টাকার ডিম বিক্রি করতে পারবেন।
রাজ্জাকের স্ত্রী জাহানারা খাতুন জানান, ছেলে, বৌমা ও নাতিসহ পাঁচজনের পরিবার। সবাই আমরা হাঁসের খামারে পর্যায়ক্রমে শ্রম দেই। ভোরে ঘুম থেকে উঠে খামার পরিষ্কার করে নৌকা থেকে শামুক নামিয়ে হাঁসগুলোকে খেতে দেই। পাঁচ মাস যাবত হাঁসের পিছনে টাকা ঢালছি। ব্র্যাক থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে শামুক ধরার জন্য বড় একটা নৌকা এবং বাদাই জাল কিনেছি। বর্তমানে কয়েকটি হাঁস ডিম দেয়া শুরম্ন করেছে। আশা করছি আগামী মাস খানেকের মধ্যে শতকরা ৮০টি হাঁস ডিম দেবে। এখন বিলে পানি আছে বাড়ির কাছেই হাঁস রাখছি। শুষ্ক মৌসুমে হাঁস নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। সে সময় বাড়ি ছেড়ে হাঁস নিয়ে দূরদূরান্ত্মে যেতে হয়। রাতে নিরাপদে হাঁস রাখার জন্য চাটমোহর-মান্নান নগর সড়কের পাশে ৪ শতক জায়গা লিজ নিয়েছি। এর জন্য বছরে দুই হাজার ৫শ’ টাকা জমির মালিককে দিতে হয়। আলোর জন্য করেছি সৌর বিদু্যতের ব্যবস্থা। বাড়ির সবাই পরিশ্রম করছি সুখের আশায়, সুদিনের আশায়। যদি কিছু জায়গা জমি করতে পারি।