আমাদের দেশে উত্পাদিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মধ্যে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা এবং কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে টিভি, ফ্রিজ, বৈদ্যুতিক পাখা, এসি, পানির পাম্প, টেলিফোন সেট, মোবাইল সেট, বৈদ্যুতিক মিটার, উন্নতমানের বৈদ্যুতিক লাইট, বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ভিসিডি, রেডিও সহ নানা সামগ্রী। দুই দশক আগেও এসব ইলেকট্রিক পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ৮০-এর দশকের গোড়ার দিকে এদেশের কিছু শিল্প-উদ্যোক্তা বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক পণ্য উত্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় এদেশে উত্পাদিত ইলেকট্রিক সামগ্রী তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। ৯০-এর দশকের দিকে ইলেকট্রিক পণ্য উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত বিশ্বের নামিদামি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী উত্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। উন্নত প্রযুক্তিতে উন্নত মানের পণ্যসামগ্রী উত্পাদনের ফলে এদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়। তারপর ধীরে ধীরে এসব প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভিত্তিতে পণ্যসামগ্রী উত্পাদন করতে থাকে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের মানুষ আর আগের মতো বিদেশি ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী ক্রয় করছেন না। তারা দেশের তৈরি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ক্রয় করছেন।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে বর্তমান বাজারে প্রচলিত বিদেশি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর স্থায়িত্ব থেকে আমাদের দেশের তৈরি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর স্থায়িত্ব বেশি। বিদেশে তৈরি টিভি, ফ্রিজ, এসি, বৈদ্যুতিক পাখাসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী বিক্রির সময় অনেক ক্ষেত্রে ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি দেওয়া হয় না। অপরদিকে আমাদের দেশে তৈরি বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্য সামগ্রী বিক্রির সময় ওয়ারেন্টি এবং গ্যারান্টি দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে মানুষ দেশে তৈরি ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রীর দিকে ঝুঁকছেন বেশি। তা ছাড়া দেশে উত্পাদিত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মূল্য বিদেশি সামগ্রীর তুলনায় অনেক কম। এদেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রী সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসায় এসবের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশে উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে টিভি, ফ্রিজ দেখা যায়। প্রাপ্ত তথ্য থেকে আরো জানা যায়, দেশে উত্পাদিত বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর গুণগত মান ভালো হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এসব সামগ্রীর বেশ চাহিদা রয়েছে। পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে সীমিত আকারে আমাদের দেশে উত্পাদিত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে।
বিদেশের বাজারে আমাদের দেশের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর চাহিদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন মেলায় আমাদের দেশে উত্পাদিত বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স পণ্যসামগ্রীর প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। এই শিল্পে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় এ শিল্পে আমাদের দেশের শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। তা ছাড়া আমাদের দেশের শ্রমিকদের মেধা অনেক উন্নত। এই শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে বিশেষভাবে উত্সাহিত করতে হবে। স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণ প্রদানের মাধ্যমে শিল্প উদ্যোক্তাদের মূলধন সমস্যার সমাধান করতে হবে। যেকোনো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে শিল্প প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো দূর করতে হবে। আগ্রহী শিল্প উদ্যোক্তাদেরকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে এদেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের পোশাক শিল্প, পাট শিল্প, চা শিল্প, চামড়া শিল্পের মতো ইলেকট্রনিক্স শিল্পকেও শিল্পের মর্যাদা দিতে হবে। ইলেকট্রনিক্স শিল্পের প্রসার ঘটলে এদেশের বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সরকার যদি এই শিল্পের দিকে একটু নজর দেয় তবে রপ্তানি আয় যেমনি বৃদ্ধি পাবে তেমনি এদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে।