পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সীমান্তের বিজয়পুর এলাকা। এখানকার মূল আকর্ষণ হচ্ছে বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়। এ ছাড়া পর্যটক আকৃষ্ট করার মতো রয়েছে রানি কং গির্জা, কমলা রানির দিঘি ও সোমেশ্বরী নদী। কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে গভীর নীল পানি, কিংবা সিলেটের জাফলংয়ে স্বচ্ছ পানির গল্প হয়তো অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু সবুজ রঙের মিশ্রণে অদ্ভুদ রাঙা হ্রদের কথা অনেকেরই অজানা। বিজয়পুরে চিনামাটির পাহাড় ঘুরতে এলে জানা হবে ওই হ্রদের কথা।
বিজয়পুরে চিনামাটির পাহাড়ের বুক চিরেই জেগে উঠেছে নীলচে সবুজ রঙের হ্রদ। পানির রঙকে আরও গাঢ় করেছে সাদা মাটি। বিচিত্র আবহাওয়া, সোমেশ্বরীর কাশবন আর দূর আকাশে হেলান দিয়ে গারো পাহাড়ের ধ্যানমগ্নতা প্রকৃতিপ্রেমীদের বিমুগ্ধ করে।

চিনামাটির পাহাড় ও সমতলভূমি মিলিয়ে বিজয়পুরের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ প্রায় ৬০০ মিটার। বিস্তর পাহাড়জুড়ে রয়েছে সাদা মাটি। কিছু জায়গায় লালচে মাটিও দেখা যায়। পাহাড় থেকে মাটি কাটায় সেখানে হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে। এর পানি কোথাও নীল আবার কোথাও লাল। ওই হ্রদের নীল পানিই দূর করিয়ে দেয় পর্যটকদের অবসাদ ও ক্লান্তি।
চিনামাটির পাহাড়ের পাদদেশ দিয়েই বয়ে গেছে সোমেশ্বরী নদী। এটি বর্তমানে কয়লা খনি হিসেবে পরিচিত। ওই নদীর নীল পানিতে সাদা চিনামাটি পাহাড়ের প্রতিবিম্ব এক অলৌকিক সৌন্দর্যের প্রতীক। এ ছাড়া বিজয়পুরে রয়েছে রানি কং গির্জা ও দুর্গাপুরের বিরিশিরি ইউনিয়নের পাশেই কমলা রানির দিঘি। এটি ‘সাগর দিঘি’ নামে পরিচিত। এর চারপাশের নিরিবিলি পরিবেশ যে কারো মনে প্রশান্তি এনে দেয়। এমন পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা। আরও আছে ভেদিকুড়া চিনামাটির পাহাড়ের ওপর নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনসাপাড়া মিশন। এখানে বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৃগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা এসে পড়াশোনা করেন। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের মিশনটি যে কারো নজর কাড়ে।
শীতকালই সাদা মাটির পাহাড় ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো সময়। তাই ধোবাউড়া ও দুর্গাপুর সীমান্তে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ভ্রমণে আসেন সৌন্দর্যপিপাসুরা। সচেতন মহল মনে করছে, সোমেশ্বরী নদীতে ব্রিজ হলে সাদা মাটির পাহাড় ঘিরে পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। রাস্তাঘাটের উন্নয়নসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এলাকাটি হয়ে উঠতে পারে একটি মনোরম পর্যটনকেন্দ্র।
যেভাবে যাবেন : ময়মনসিংহ সদর থেকে বাসযোগে ধোবাউড়া হয়ে সরাসরি বিজয়পুরে যাওয়া যায়। এ ছাড়া ময়মনসিংহ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ধোবাউড়া এসে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল দিয়েও বিজয়পুর যাওয়া যাবে।