কৃত্রিম কিডনি আবিষ্কারে: বাঙালি বিজ্ঞানী শুভ রায়
বাড়ছে কিডনি রোগীর সংখ্যা। এই কিডনি সমস্যার সমাধানে দারুণ সাফল্য অর্জন করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী। নতুন এই আবিষ্কারের সফল পরীক্ষাও চালিয়েছেন তিনি। হয়তো ২০১৯ সাল নাগাদ বাজারে আসবে কৃত্রিম কিডনি। এ বছরের শুরুতে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে ব্যাপক হইচই ফেলে দেন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী শুভ রায়। তার আবিষ্কৃত এই কৃত্রিম কিডনি আসল অঙ্গের মতোই কাজ করতে সক্ষম। এই কিডনি রক্তের বিষাক্ত পদার্থ ছাঁকা থেকে শুরু করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ভিটামিন ডি তৈরি, সব কাজই করতে পারবে। এরমধ্যে এই আবিষ্কারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন শুভ রায়। তিনি আশা করছেন, কয়েক বছরের মধ্যে এই কিডনি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে। তবে এজন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি দরকার। আপাতত সেই অনুমতির অপেক্ষায় আছে শুভ রায়ের দল।
এ প্রসঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে শুভ জানান, ১০ বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ জন সহকর্মীকে নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন তারা। এই প্রকল্প সফল হলে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় কিডনির চাহিদা অনেকটাই পূরণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুভর এই আবিষ্কারের খবর ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে প্রকাশিত জার্নাল ‘টেকনোলজি রিভিউ’-তে ছাপা হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে এই খবর ফলাও করে প্রচার করা হয়। তার পড়াশোনা ও কর্মজীবন আমেরিকায় হলেও মনেপ্রাণে বাংলাদেশি হিসেবেই গর্ববোধ করেন এই বিজ্ঞানী। শুভ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ছেলে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে গেছি।’ বাংলাদেশের চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন শুভ। উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিয়েছিলেন। এর আগে বাবার কর্মক্ষেত্রের সুবাদে উগান্ডায় বসবাস করেছেন অনেকদিন।
নাসার ইনভেন্টর অব : দ্য ইয়ার সুলতানা
ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) গোডার্ডের এফেওয়াই ১৭ আইআরওডি ইনভেন্টর অব দ্য ইয়ার জিতেছেন বাংলাদেশি কন্যা মাহমুদা সুলতানা। সম্প্রতি তিনি কোয়ান্টাম ডট সেন্সর থ্রিডি আবিষ্কার করার কারণে এই পুরস্কার লাভ করেছেন। মাহমুদা তার গবেষণায় কার্বনের বিশেষ রূপ গ্রাফিনকে কোয়ান্টাম ডট আকারে উপস্থাপন করেন এবং তা দিয়ে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে ২০ বাই ২০ ছক সমৃদ্ধ সেন্সর তৈরি করেন, যা দিয়ে আলোর তরঙ্গ ধারণ করা যায়। তার এই সৃজনশীল উদ্ভাবনী সূর্যের করোনার ছবি তুলতে সাহায্য করবে। তাকে নিয়ে নাসা গোডার্ডের চিফ টেকনোলজিস্ট পিটার হিউজ বলেন, ‘সুলতানাকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত। তিনি নাসার যেসব কাজে অংশগ্রহণ করেছেন, তার প্রতিটি ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন।’ মাহমুদা নাসায় কর্মরত সর্বকনিষ্ঠ নারী সদস্য। তিনি এই পুরস্কার ছাড়াও নাসায় আরও অনেক অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি নাসার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
মাহমুদা সুলতানার জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি শৈশব থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
তাকে নিয়ে নাসার আরেক সিনিয়র টেকনোলজিস্ট ফর স্ট্র্যাটেজিক ইন্টেগ্রেশন টেড সোয়ানসন বলেন, ‘একজন সেরা গবেষকের মধ্যে যে যে গুণ থাকা প্রয়োজন এর সবগুলোই তার মধ্যে রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সুলতানা খুব শিগগিরই নাসার একজন ন্যানো-টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ হবেন।’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও গবেষণায় : রেজা
ছোটবেলা থেকেই প্রকৃতি ও পশুপাখি খুব পছন্দ করেন ড. এএইচএম আলী রেজা। যুক্তরাষ্ট্রের ডেলটা স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান ও পরিবেশবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক তিনি। বিদেশে বসেও কাজ করে যাচ্ছেন দেশের বন্যপ্রাণীদের নিয়ে। করছেন গবেষণা। ঝিনাইদহের সন্তান আলী রেজা কাঞ্চননগর মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও সরকারি কেসি কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পছন্দ করার পিছনেও কারণ ছিল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্যাম্পাস। পড়ালেখা করেন বন্যপ্রাণী নিয়ে। অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এই গবেষক। ২০০০ সালের দিকে তিনি মাস্টার্স করেন। বাঘ সংরক্ষণে কাজ করার ইচ্ছা নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় যোগ দেন তিনি। পরে সেখানে ২ বছর কাজ করার পর ফিরে আসেন জাহাঙ্গীরনগরের ক্যাম্পাসে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন শিক্ষক হিসেবে। শিক্ষার্থীদেরকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার মাঝে তিনি আনন্দ ও তৃপ্তি খুঁজে পান, এজন্যই বেছে নেন শিক্ষকতা। মাঝে পিএইচডি করার জন্য যান যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ইউনিভার্সিটিতে। তার পিএইচডির বিষয়ও ছিল বাংলাদেশের পশুপাখি। শুরুতে ভেবেছিলেন দেশে ফিরেই সরাসরি দেশের জন্য কাজ করবেন। কিন্তু পরে তিনি দেখতে পান, বিদেশে বসে পশুপাখি নিয়ে কাজ করার সুযোগটা অনেক বেশি। তাই থেকে গেলেন সেখানে। তবে প্রতিবছরই দেশে আসেন আলী রেজা, তার সঙ্গে আসেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও গবেষণার নানা বিষয় নিয়ে নিয়মিত দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বক্তৃতা করেন বিভিন্ন আলোচনায়। বন্যপ্রাণী গবেষণা ও সংরক্ষণের ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পান এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরাও যেন বাংলাদেশে এসে কাজ করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছেন আলী রেজা। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাণী সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরির জন্যও তিনি কাজ করতে চান।
লিউকেমিয়ার পর্যায় নির্ণয় করতে শারমিনের বায়োসেন্সর
লিউকেমিয়া; রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর প্রধান লক্ষণ হলো রক্তকণিকা, সাধারণত শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি। লিউক অর্থাত্ সাদা, হিমো অর্থাত্ রক্ত, রোগটির নামই হয়েছে এর থেকে। রক্তে ভ্রাম্যমাণ এই শ্বেত রক্ত কণিকাগুলো অপরিণত ও অকার্যকর।
বিশ্বে সকল লিউকেমিয়ার মধ্যে ১২% একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া, যা দ্বারা শিশুরা প্রধানত আক্রান্ত হয়। লিউকেমিয়ার স্ট্যাজ নির্ণয় করার মতো এখনো কোনো ডিভাইস আবিষ্কার হয়নি। তাই একটি বায়োসেন্সর মাধ্যমে সরাসরি সামান্য পরিমাণ রক্ত ব্যবহার করে মাইক্রো আরএনএর লেভেল নির্ণয় করে লিউকেমিয়ার স্ট্যাজ(পর্যায়) জানার উপায় বের করার কাজ করেছেন শারমিন হক। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়ালসের (ইউএনএসডব্লিউ) স্কুল অব কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি করছেন শারমিন হক। যে বিষয় নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন তা হলো An electrochemical biosensor for multiplex detection of miRNA related to leukemia. লিউকেমিয়ার পর্যায় জানতে হলে আগে জানতে হবে মাইক্রো আরএনএর পর্যায়। আরএনএর মান রাইবো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড (আরএনএ) হলো নিউক্লিয়িক অ্যাসিড পলিমার। লিউকেমিয়ার স্ট্যাজ (পর্যায়) জানার এই উপায় বের করার কারণ হলো, এই রোগে আক্রান্ত রোগী যেন লিউকেমিয়ার স্ট্যাজ (পর্যায়) জেনে সঠিক চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারে। চিল্ড্র্রেন ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে এই প্রজেক্ট করছেন শারমিন।