অফিস প্রাঙ্গণেই চোখে পড়বে উপজেলার ভূমিসংক্রান্ত তথ্যাদির বিলবোর্ড। পাশের আরেকটি বোর্ডে লেখা আছে নামজারি প্রক্রিয়া ও খুঁটিনাটি তথ্য।
একই বোর্ডে শোভা পাচ্ছে মিসকেস (বিবিধ মামলা) বিষয়ক তথ্য, জমি কেনার আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি সে সম্পর্কিত তথ্যাদি। অফিসকক্ষের বাইরে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের জন্য আছে বসার ব্যবস্থা। দুর্নীতি ও অনিয়ম রুখতে রয়েছে গণবিজ্ঞপ্তি। রয়েছে তথ্য, পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য হেল্প ডেস্ক। হেল্প ডেস্কের ঠিক পাশেই রয়েছে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। সেবার বিষয়ে কোনো অভিযোগ ও পরামর্শের জন্য রয়েছে মূল্যায়ন কিংবা অভিযোগ বাক্স। কর্মচারীদের কাজে গতিশীলতা আনতে সৃষ্টি করা হয়েছে অনুকূল পরিবেশ এবং সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য রয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। ’ জনবান্ধব এমন ছবি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা ভূমি অফিসের। আর এসব কাজের মূল রূপকার বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপায়ন দাস শুভ। মাত্র চার মাসেই এ অফিসটির এমন পরিবর্তন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত ২ মে দীপায়ন দাস শুভ এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদানের পর থেকে তাঁর নিরলস চেষ্টা, মেধা ও শ্রমের দ্বারা আমূল পরিবর্তন আনেন এই ভূমি অফিসে। মুক্তাগাছা উপজেলা ভূমি অফিসটি ছিল জমিদারদের ব্যবহৃত পরিত্যক্ত একটি টিন-কাঠের গড়া দোতলা বাড়ি। জরাজীর্ণ সেই ভবনেই চলত ভূমি অফিসের সব কাজ। দায়িত্ব নিয়েই অফিসটির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়নে হাত দেন দীপায়ন দাস শুভ। অফিসটিকে তিনি একটি নান্দনিক রূপ দেন। এরপর তিনি জনগণের সুবিধার জন্য হাতে নেন একের পর এক পরিকল্পনা। বিশেষ করে তিনি নজর দেন অফিসে জনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে। অফিসে এসে লোকজন যেন ভয় না পায় সে ব্যাপারেও তিনি সচেতন হন। আর এ উদ্দেশ্যে তিনি বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন, যার মধ্যে কিছু কিছু এরই মধ্যে বাস্তবায়নও করেছেন দীপায়ন দাস শুভ।
অফিসে প্রতি বুধবার অনুষ্ঠিত হয় গণশুনানি। এতে জনগণ সরাসরি উপস্থিত হয়ে তাদের সমস্যার কথা বলতে পারে। আর জনগণকেও কথা বলার জন্য দিনের পর দিন অফিসে ঘুরতে হয় না। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সচিত্র পরিচিতিও তিনি অফিসে টানিয়ে দিয়েছেন, যাতে লোকজন বুঝতে পারেন কোন কর্মকর্তা কোন পদে আছেন। কার কী কাজ। এতে দালাল ও অপরিচিত লোকের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে সাধারণ জনগণ। অফিসের দেয়ালে তিনি মুজিবনগর সরকারের অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের ফাস্ট মাইলস্টোনের একটি পেইন্টিংও স্থাপন করেছেন। উপজেলার কাউনডাঙ্গার চর থেকে সেবা নিতে আসা বিজেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘এখন ভূমি অফিসে এলে আমাদের আগের মতো আর ভোগান্তি পোহাতে হয় না। নির্ধারিত ফির বেশি টাকাও দিতে হয় না। এ ছাড়া যেকোনো সমস্যায় এসিল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যায়। ’
শুধু তা-ই নয়; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি এ নিয়ে কাজ করছেন। নিজের ফেসবুক ওয়ালে জনসচেতনতায় ভূমিসংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে নিয়মিত পোস্ট দিয়ে থাকেন এসিল্যান্ড দীপায়ন দাস। জনগণকে হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে ভূমির বিভিন্ন আইন-কানুনও তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন। এতে তিনি বেশ সাড়াও পাচ্ছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপায়ন দাস শুভ এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে আমি জনগণের সেবায় নিজেকে সব সময়ই সচেষ্ট রাখার চেষ্টা করি। আমার অফিশিয়াল ফোন নম্বর আমি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ’
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংবাদিক এম ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘ভালো কিছু করার মানসিকতা নিয়ে কাজ করলে যে ভালো করা যায় এবং প্রশাসনকে জনবান্ধব করা যায় তার দৃষ্টান্ত সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপায়ন দাস শুভ। তিনি আসার পর অনেকটা পরিবর্তন করতে পেরেছেন। ’ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য হেলাল উদ্দিন নয়ন বলেন, ‘আমরা যত দূর জেনেছি তিনি একজন ভালো মানুষ। আর ভালো মানুষের পক্ষে ভালো প্রশাসক হওয়াও স্বাভাবিক। এরই মধ্যে তিনি বেশ ভালো কিছু কাজ করেছেন। অফিসটিকে দালালমুক্ত করেছেন। আমরা প্রত্যাশা রাখব, কোনো বাধা যেন এই ভালোকে থমকে দিতে না পারে। ’