পাথর আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে বুড়িমারীর আয়

বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ২০০৮-০৯ অর্থবছরেও কোনো আয় ছিল না। আট বছরের ব্যবধানে গত অর্থবছরে দেশের চালু ১০ বন্দরের মধ্যে আয়ের দিক থেকে এটি এখন দ্বিতীয় অবস্থানে পৌঁছেছে। লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত বন্দরটি দিয়ে বিপুল পাথর আমদানি হওয়ায় আয় বেড়েছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বুড়িমারী বন্দর দিয়ে ৪৩ লাখ ৯৩ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে। যার সিংহভাগ পাথর। ওজনের ভিত্তিতে আমদানি হওয়া পণ্যের হিসাবে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয়েছে এ বন্দর দিয়ে। গত অর্থবছরে ২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা আয় করেছে এ বন্দর, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ১৬ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ আয় করেছে এ বছর।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান সমকালকে বলেন, গত কয়েক বছর এ বন্দরের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে পাথর আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া চাল ও ভুসিও আমদানি হয়। সম্প্রতি রফতানিও শুরু হয়েছে বন্দরটির মাধ্যমে। যে কারণে বন্দরের আয় বেড়েছে।

স্থল কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) আনিছ আহমেদ সমকালকে বলেন, পদ্মা সেতুসহ অন্যান্য সেতু, বিভিন্ন ফ্লাইওভার, সড়কসহ সরকারের বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের প্রয়োজনে এবং বেসরকারি খাতে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত কয়েক বছর পাথর আমদানি বেড়েছে। শুধু বুড়িমারী নয়, হিলি, ভোমরা, সোনামসজিদ বন্দর দিয়েও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বোল্ডার ও চিপস পাথর আমদানি হচ্ছে। ফলে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে মোট আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। দেশে সেতু, ভবন ও সড়কের মতো অবকাঠামো নির্মাণে ইট ও ইটের খোয়া ব্যবহার হতো। কয়েক বছর ধরে টেকসই নির্মাণ সামগ্রী হিসেবে ইটের খোয়ার জায়গা দখল করে নিচ্ছে পাথর। দেশে বর্তমানে যেহারে অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে, তাতে বছরে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন পাথরের চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে স্থলপথে ভারত, নেপাল ও ভুটানের পাশাপাশি নৌপথে ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভিয়েতনাম এবং মালয়েশিয়া থেকে পাথর আমদানি হচ্ছে। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাথর আমদানি হয় ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি। চট্টগ্রাম কাস্টমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি হয় ৩২ লাখ টন। দেশে মোট ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি চালু আছে। বাকিগুলো চালুর অপেক্ষায় দীর্ঘদিন। চালু ১০ বন্দরের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে ২৭ লাখ ৬৩ হাজার, হিলি বন্দর দিয়ে ২৪ লাখ ৩৬ হাজার, ভোমরা বন্দর দিয়ে ২২ লাখ ৫৫ হাজার এবং বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার টন পণ্য আমদানি হয়েছে। তবে আয়ের হিসাবে এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে বেনাপোল। দেশের প্রধান এ স্থলবন্দর গত অর্থবছরে ৪৪ কোটি টাকা আয় করেছে। এরপরই রয়েছে বুড়িমারী। বন্দরটির আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ভোমরা বন্দরের আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ১০ বন্দর মিলে এই প্রথম স্থলবন্দরগুলোর আয় ১০০ কোটি টাকা ছুঁয়েছে।