দেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি করে গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন করবে সরকার। বাজারগুলোতে তিনতলা ভবন নির্মাণ করা হবে, যার আয়তন হবে চার হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট পর্যন্ত। এসব বাজারে পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাও থাকবে। এ জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এদিকে, গতকালের একনেক সভায় উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এক হাজার ৭৩০ কোটি টাকার বাজার উন্নয়নের এ প্রকল্পসহ ১৫ হাজার ২২২ কোটি টাকার মোট আটটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেকের চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। সংশ্নিষ্ট মন্ত্রী, একনেক সদস্যরা, প্রতিমন্ত্রী ও অন্যান্য সচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সাংবাদিকদের জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ এলাকার কৃষি ও অকৃষি পণ্য বাজারজাতকরণে সুবিধা দিতে বাজার উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ বাজারে নারীদের পণ্য বেচাকেনার আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ৫২০টি বাজার উন্নয়ন করা হবে। স্থানীয় মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সারাদেশে মসজিদ, মন্দির, ঈদগাহ, শ্মশান ও কবরস্থান উন্নয়নে ৬৬৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। তারও আগে ২০১৫ সালে সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণে ছয় হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। এসবই এমপিরা নিজ নিজ এলাকায় পছন্দ অনুযায়ী খরচ করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এমপিদের পছন্দমতো প্রতিটি উপজেলা থেকে নির্বাচিত একটি বাজারের উন্নয়ন করা হবে। একটি বাজার উন্নয়নে তিন কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। প্রতিটি বাজার হবে চারতলা ফাউন্ডেশনের ওপর দোতলা। বাজারের জন্য যে নকশা তৈরি করা হয়েছে, তাতে দেখানো হয়েছে সবজি, মাছ, মাংস, গাড়ি পার্ক, চায়ের স্টলের জন্য আলাদা জায়গার ব্যবস্থা রাখা হবে।
এদিকে, গতকালের একনেক সভায় উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১১ সালের অক্টোবরে প্রথম একনেক সভায় নয় হাজার ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও প্রকল্পটি কোনো দৃশম্যান অগ্রগতি হয়নি। ছয় বছরে প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি না হলেও গতকালের একনেক সভায় প্রকল্পটির ব্যয় এক হাজার ৮৭২ কোটি বাড়িয়ে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। ফ্ল্যাট নির্মাণের স্থবিরতা সম্পর্কে বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১১ সালে প্রকল্পের নকশা সঠিকভাবে করা হয়নি। এ ছাড়া গ্যাসের সিলিন্ডার ব্যাংক, স্কুল ও ব্যবস্থাপনা ভবন নির্মাণ, ‘ই’ ও ‘ঈ’ ব্লকের ফ্ল্যাটের আকার পরিবর্তনসহ নানা কারণে প্রকল্পটি গত ছয় বছরে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পে ১২৫০ ও ১০০০ বর্গফুটের দুই ধরনের ফ্ল্যাট ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ৮৫০ বর্গফুটের কিছু ফ্ল্যাট রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রকল্পটিতে ১৫ হাজার ৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কিছু ফ্ল্যাট ছোট হওয়ায় ফ্ল্যাটের সংখ্যা বাড়বে।
ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং অপসারণ ব্যবস্থাপনা শিরোনামের আলাদা ১৪৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের অবকাঠামো উন্নয়নে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আলাদা একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এ ছাড়া ৫৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রকল্প-১ :ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো বাস্তবায়ন এবং কাস্টমস আধুনিকায়ন জোরদারকরণ শিরোনামে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৫৩০ কোটি টাকা ঋণ দেবে।