নিজেদের সংসারের কাজের ফাঁকে হাতের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নারীরা। কুটির শিল্পের কাজে এগিয়ে এসেছেন তারা। নিপুণ হাতে সুই-সুতা দিয়ে তৈরি করছেন নকশা করা শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ও ওড়না। কেউ সংসারের কাজের ফাঁকে আর কেউ বা লেখাপড়ার পাশাপাশি এ কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ, রাজীবপুর ও বড়হিত ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের দুই শতাধিক নারী এখন হাতের কাজ করে বাড়তি আয় করছেন। শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজে জরি ও পুঁতি বসানোর কাজ করে সংসারের অভাব ঘোচানোর পাশাপাশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন ওইসব নারী। শুধু তা-ই নয়, অর্থাভাবে যেসব শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে পারছেন না কিংবা যাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে, তারাও যুক্ত হয়েছেন এ কাজের সঙ্গে। স্থানীয় গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি সংগঠন এ কাজের সার্বিক তদারকিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগান দিচ্ছে।
মোছা. নার্গিস আক্তারের স্বামী গত তিন বছর আগে দুরারোগ্য ব্যাধিতে মারা গেছেন। এক প্রতিবেশীর এ ধরনের কাজ দেখে তিনি উৎসাহিত হন। এখন পাঁচ-ছয়দিনে একটি শাড়ির জরি ও পুঁতির কাজ করে আয় করছেন ৫০০-৬০০ টাকা। নার্গিস আক্তার জানান, এ কাজ হাতে না নিলে হয়তো মানুষের কাছে হাত পাততে হতো। তরপশুনামনি গ্রামের লুৎফর নাহার ষষ্ঠ শ্রেণিতে এলাকার মাইজবাগ বিদ্যালয়ে এবং মাহফুজা স্থানীয় কলেজে পড়েন। সংসারে অভাব-অনটন থাকায় তাদের লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়। তাই তারাও যুক্ত হয়েছেন এ কাজে। বর্তমানে তাদের মতো অনেক ছাত্রী এ ধরনের কুটির শিল্পে যুক্ত হয়ে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন।
মাইজবাগ ইউনিয়নের বৈরাটি গ্রামের সাইফুল ইসলাম আজাদী জানান, তিনি গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি। তার সংস্থায় এলাকার শতাধিক নারী সদস্য হয়ে শাড়ি ও পুঁতি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি জানান, এক সপ্তাহে একজন নারী একটি শাড়ির নকশার কাজ শেষ করতে পারেন। এতে মুজুরি পান ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। অন্যদিকে একটি জামায় নকশা করে পান ৪০০ টাকা। তাদের তৈরি এসব শাড়ি বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ও জামা বিক্রি হয় দুই হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত্ম। দরিদ্র এসব নারীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন শিপন নামের এক ব্যবসায়ী।