প্রতিবন্ধিতা, দারিদ্র্য কিছুই দমাতে পারেনি বাবুলকে

একটি পা বাঁকা, স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেন না বাবুল। দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। কিন্তু এর কোনো কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। নিজের বাণিজ্যিক খামারে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন শিক্ষিত যুবকদের। বেকারদের জন্য তিনি এখন অনন্য অনুপ্রেরণা।

এ অদম্য যুবকের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বড়খড়ি গ্রামে। পুরো নাম বাবুল আখতার। বাবা মৃত আবুল হাশেম। মাত্র ২৮ বছর বয়সী বাবুল শ্রম আর অধ্যবসায় দিয়ে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘ড্রিম মাশরুম সেন্টার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে মাশরুম উত্পাদন ও প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পড়াশোনায় নবম শ্রেণী পার হতে না পারলেও তার প্রকল্প পরিচালক একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষক। খামারে কর্মরত ৬০ জনই স্নাতকোত্তর পাস।

বাবুলের ভাষ্যমতে, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে এখন প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক তিনি। খামারের জন্য রয়েছে একটি জিপ গাড়ি ও চারটি প্রাইভেট কার। নিজ বাড়িসংলগ্ন ১৪টি কক্ষে ও চারটি শেডে মাশরুম উত্পাদন করছেন। পাশেই মাশরুম প্রক্রিয়াজাতকরণ ল্যাবরেটরি।

আচার-আচরণে অত্যন্ত অমায়িক এ যুবক বলেন, এতসব শিক্ষিত মানুষ এখানে চাকরি করেন এ নিয়ে আমার কোনো অহঙ্কার নেই। তবে নিজের পেছন ফিরে তাকালে নিজেই বিস্মিত হই। মাত্র ১০ বছর আগেও বেকারত্ব আর দারিদ্র্যে জর্জরিত ছিলাম। আর এখন আমার খামারে পিএইচডি ও মাস্টার ডিগ্রি পাস মানুষদের চাকরি দিয়েছি।

বাবুল আখতারের ড্রিম মাশরুম সেন্টারে কাজ করেন দেড়শ মানুষ। এর মধ্যে স্থায়ী স্টাফ ১০০ জন। তিনি জানান, তার খামারের মাশরুম খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব জেলায় বিক্রি হচ্ছে। দেশের সব বিভাগীয় সদরে অফিস কাম শোরুমও আছে তার।

শুরুর গল্পটি জানতে চাইলে বাবুল বলেন, ২০০৬ সালের একদিন মাগুরার এক ডাক্তারের চেম্বারে আসা কয়েকজন মানুষের মধ্যে মাশরুম নিয়ে আলাপচারিতা তার মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে। বিষয়টি জেনে ২০০৭ সালে তাকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন তত্কালীন জেলা প্রশাসক ভিকারুন্নেসা খাতুন। যশোর হর্টিকালচার সাব-সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছু মাশরুম বীজ ও ৬০০ টাকা পুঁজি করে শুরু করেন তিনি।

কথা প্রসঙ্গে বাবুল জানান, তার খামারে ‘ওয়েস্টার’ ও ‘গ্যানোর্ডমা’ জাতের মাশরুম উত্পাদিত হয়। প্রতিদিন ৩০ কেজি শুকনো মাশরুম দেড় হাজার টাকা কেজিদরে বিক্রি করেন তিনি। সব খরচ বাদে প্রতি মাসে লাভ থাকে কমপক্ষে ২ লাখ টাকা।

এদিকে বাবুলের সাফল্য দেখে মাগুরার ওই গ্রামে আরো ৪০টি পরিবার মাশরুম চাষ শুরু করেছে। বাবুল আখতারের খামার পরিদর্শন করেছেন মাগুরার জেলা প্রশাসক আতিকুর রহমান। এ উদ্যমী ও উদ্যোগী যুবকের অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন তিনি।