পল্লীতে ঢাকার চিকিত্সা পৌঁছে দিচ্ছে রুবাইয়াতের ‘জীয়ন’

বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের প্রায় ১০ কোটি মানুষ উন্নত চিকিত্সা সেবা পায়না। তাদের হাতের কাছে আছে ফার্মেসি। সেখানকার পল্লী চিকিত্সকই এই বিশাল সংখ্যক মানুষের চিকিত্সার মূল ভরসা। তাদের বিশেষায়িত চিকিত্সা সেবা দিতে কাজ করছে রুবায়াত খানের ‘জীয়ন’।

নেত্রকোনা , কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ১০ হাজার লোক ৩০০ টাকা ব্যয়ে স্মার্টফোনের মাধ্যমে পাচ্ছে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বারডেমের মত নামিদামি হাসপাতালের স্বানামখ্যাত চিকিত্সদের স্বাক্ষর করা ব্যবস্থা পত্রের মাধ্যমে উন্নত চিকিত্সা। কিভাবে এটি সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রুবাইয়াত জানান—এই তিন জেলার ৪০ জন পল্লী চিকিত্সককে তারা প্রশিক্ষন দিয়েছেন। তারা স্মার্টফোনের মাধ্যমে রোগীর রোগ সর্ম্পকে তথ্য সংগ্রহ করে তা রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট চিকিত্সকদের নিকট। আর মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে দেয়া হয় টাকা। বিশেষায়িত চিকিত্সক সেই মোতাবেক তার ব্যবস্থাপত্র দেন। যাদের ফোনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপত্র দেয়া সম্ভ নয়, তারা কোথায় কার কাছে চিকিত্সা পাবেন সেই পরামর্শ দেয়া হয় বিনা মূল্যে।

এই সামাজিক উদ্যোগ হচ্ছে ‘জীয়ন’ আর রুবাইয়াত হলেন এর উদ্যোক্তা। কিভাবে এমন জন কল্যাণকর কাজের সাথে যুক্ত হলেন প্রশ্নের জবাবে রুবাইয়াত বলেন, ছোটবেলা থেকে ছিল তার কম্পিউটারের সাথে সখ্য। বাবা মহিদুল হক খান ছিলেন পরিবেশ আন্দোলনের একজন প্রতিষ্ঠাতা। তাই মানুষের জন্য কাজ করাটা ছিল তার পরিবারের শিক্ষা। তিনি যখন আইইউবি থেকে ডেমোগ্রাফি বিষয় পড়াশোনা করেন তখন গবেষণাকালে দেখতে পান প্রান্তিক মানুষ চিকিত্সাসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। আবার সহজ সরল হওয়ার ফলে তারা ভুল চিকিত্সার শিকারও হন বেশি। কিভাবে এসব মানুষের কাছে আধুনিক চিকিত্সা পৌঁছে দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করতে হার্ভার্ডে অধ্যায়নরত বন্ধু মৃদুল চৌধুরীর সাথে আলোচনা করে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইম্পাওয়ার’। আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান তাদের এই সামাজিক কাজের জন্য বিনিয়োগ করে। ২০১৩ সালে ইম্পাওয়ার হয়ে যায় ‘জীয়ন’।

রুবাইয়াত জানান, এক রোগের চিকিত্সার জন্য শুরুতে ৩০০ টাকা নেয়া হলেও পরে যতবার আসবেন ততবার ৫০ টাকা ফি নেয়া হয়। নতুন রোগের জন্য আবার ৩০০ টাকাই দিতে হয়। তাদের প্রতিটি রোগীর তথ্য সারা জীবনের জন্য রেকর্ড করা থাকে। রুবাইয়াত আরও জানান, জীয়নের ৬৫ শতাংশ রোগী হচ্ছে নারী ও প্রবীন যাদের কেউ নিয়ে না গেলে চিকিেকর কাছে যেতে পারেন না।

জীয়ন নিয়ে স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে বলেন, গ্রাম থেকে একজন মানুষ ঢাকায় এসে চিকিত্সা করাতে হাজার হাজার টাকা খরচ হয়। কখনও কখনও ভুল চিকিত্সার জন্য তাদের লাখ টাকাও চলে যায়। দেশের এমন সব প্রান্তিক মানুষের কাছে প্রযুক্তির মাধ্যমে পৌঁছে যাবে আধুনিক চিকিত্সা। আর এই কাজে থাকবে জীয়ন-এর বিশেষ ভূমিকা। জীয়ন সম্পর্কে আরো জানা যাবে www.jeeon.co ওয়েব ঠিকানায় গেলে।