চুইঝাল চাষ চিংড়ির চেয়েও লাভজনক

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত চুইঝাল এখন রাজধানীসহ দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের ভোজনরসিকদের কাছে প্রিয় ও পছন্দের মসলা। শুরুতে আঞ্চলিক ভিত্তিতে শুধু খুলনার মানুষ এই মসলার ব্যবহার ও আবাদ করলেও সারা দেশে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলনায় এর আবাদও বেড়েছে। এখন চিংড়ির চেয়েও চুইঝাল চাষ লাভজনক বলছেন চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চুই লতাজাতীয় গাছ। এর কা- লতা প্রকৃতির ও ধূসর বর্ণের। চুইয়ের পাতা পান পাতা আকৃতির সবুজ বর্ণের। রসাল ঝাঁঝালো স্বাদের চুইঝালের কা- মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাংসের সঙ্গে এর ব্যবহার বেশি। চুই লতাজাতীয় গাছ বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আম, জাম, নারিকেল, সুপারি ইত্যাদি গাছের গোড়ায় এটি রোপণ করা হয়। রোপণের এক বছর পর থেকেই চুই খাওয়ার উপযুক্ত হয়। তবে কয়েক বছর বয়সী চুইয়ের স্বাদ বেশি।

ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার উপজেলার সাচিবুনিয়া ও ঝড়ভাঙ্গা গ্রামে আধুনিক এবং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ হচ্ছে চুইঝালের। সাচিবুনিয়া গ্রামের প্রায় একশ এবং ঝড়ভাঙ্গা গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার এখন চুইঝাল চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গ্রাম দুটির দেখাদেখি উপজেলার অন্যান্য গ্রামেও এখন বাণিজ্যিকভাবে চুইঝাল চাষ শুরু হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে চাষিদের সহযোগিতা করছে।
সাচিবুনিয়া গ্রামের চুইঝাল চাষি শচিন ম-ল বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাগানে চুইঝাল গাছ দেখেছি, খেয়েছি। বছরখানেক আগে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে চুইঝালের চাষ শুরু করি। এখন আমার প্রায় একশটি চুইঝাল ঝাড় রয়েছে। সামান্য কিছু বিক্রি করেছি। ৪-৫ মাস পর ৩৫-৪০ হাজার টাকার চুইঝাল বিক্রি করতে পারব।
খুলনা শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী শফি আহমেদ ডুমুরিয়ার ধানিবুনিয়া গ্রামে সাড়ে ১৬ বিঘার মাছের ঘেরের চারপাশে চাষ করেছেন চুইঝাল। তিনি বলেন, চিংড়ি চাষ করে বরাবরই ভাইরাস, অতিবর্ষণ নিয়ে ঝুঁকি আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে কেটেছে। চুইঝাল চাষ করে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না। খাবার লাগে না, ওষুধ লাগে না, পানিতে ভেসে যায় না। চিংড়ির মতো বিদেশি বায়াররা নতুন নতুন শর্তও দেয় না। আর লাভ চিংড়ির চেয়েও বেশি। বটিয়াঘাটার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবানন্দ রায় বলেন, চুইঝাল উপকারী এবং বাণিজ্যিক ফসল। খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। পতিত জমি ব্যবহার করে অল্পসময়ের মধ্যে কৃষকদের অধিক মুনাফার জন্য আমরা চুইঝাল চাষের পরামর্শ দিচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবায়েত আরা বলেন, চুইঝাল অপ্রচলিত অর্থকারী ফসল। অল্পসময়ের মধ্যে অধিক আয়ের জন্য চুইঝাল যে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে কৃষকদের সেটি জানা ছিল না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উদ্যোগ নেওয়ার পর কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় এখন তারা ব্যাপকভাবে চুইঝাল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।