ফসলের রোগবালাই দমনে হাসপাতাল

ছোট্ট একটা ঘর নিয়েই একটি হাসপাতাল। তবে এটি কোনো মানুষের জন্য নয়। ফসলের রোগবালাই নির্ণয়, দমন ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এ হাসপাতাল। বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পাকড়ি ইউনিয়নের উত্তরপাড়া গ্রামে এ কৃষি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। সোমবার হাসপাতালটির উদ্বোধন করা হয়।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি খুবই বৈচিত্র্যময়। এখানকার ফসলের রোগবালাইও আলাদা। এখন থেকে আশপাশের এলাকার ফসলের রোগবালাইয়ের ‘চিকিৎসা’ হবে এ হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা পাকড়ি ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন। মূলত তিনিই ওই হাসপাতালে সেবা দেবেন। তিনি বলেন, এ হাসপাতাল থেকে ফসল ও মাটির বিষয়ে কৃষককে সেবা দেয়া হবে। সেইসঙ্গে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার ছাড়াই শাকসবজি উৎপাদন কীভাবে করা যাবে সে বিষয়েও পরামর্শ প্রদান করা হবে এ হাসপাতাল থেকে।

জালাল উদ্দিন জানান, অনেক সময় মাঠে ফসলের রোগবালাই দেখা দিলে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই জরুরিভাবে কৃষককে পরামর্শ দেয়া হয়। এতে রোগ দমনে বেশ সময় লাগে। আবার কৃষক যেন খুব সহজেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য এ হাসপাতাল। সপ্তাহে একদিন দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত তিনি এ হাসপাতালে বসবেন। প্রয়োজন পড়লেই কৃষক যাবেন তার কাছে। আর সপ্তাহের বাকি দিনগুলো তিনি কাজ করবেন মাঠে। তিনি বলেন, কৃষি হাসপাতালে মাটি পরীক্ষা ও পোকা-মাকড় শনাক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি মিনি ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও কৃষকের সুবিধার্থে কৃষিবিষয়ক বইসমৃদ্ধ লাইব্রেরি স্থাপন করা হবে এ হাসপাতালে। এ ধরনের উদ্যোগে কৃষকের কাছ থেকে খুব ভালো সাড়া মিলছে বলেও জানান জালাল উদ্দিন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় নিজেদের একটা ঘর দিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থা। সেখানেই এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি স্থানে তাদের এ কৃষি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব হাসপাতাল থেকে কৃষি বিষয়ে সব ধরনের পরামর্শ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরাসরি কৃষিবিদদের সঙ্গে কৃষকের সমস্যা নিয়ে কথা বলার ব্যবস্থাও থাকবে। মাসে একদিন তিনি নিজেও হাসপাতালগুলোতে গিয়ে কৃষকের সমস্যার কথা শুনবেন। সোমবার পাকড়ির কৃষি হাসপাতালটির উদ্বোধনের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় কৃষককে নিয়ে বের করা হয় একটি র‌্যালিও। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উম্মাতন বেগম। এ সময় বরেন্দ্র কৃষি উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শওকত আকবর শাওন ও হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সব সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সেখানে উপস্থিত কৃষাণি মতিয়ারা খাতুন, শামিমা খাতুন ও কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ফলের রোগবালাই ও কোন সময় কোন ফসলের চাষ করতে হয় এবং কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে এখান থেকে সব জানা যাবে। সেইসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এজন্য তারা খুব খুশি।