যমুনায় টানেল হচ্ছে

দেশের দ্বিতীয় টানেল নির্মাণ হচ্ছে প্রশস্ত যমুনা নদীর তলদেশে। এটি নির্মাণে মূল সম্ভাব্যতার আগে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৮ বিষয় জানতে বিশেষ এ সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে- প্রস্তাবিত টানেলের এলাইনমেন্ট নির্ধারণে প্রাথমিক সমীক্ষা, টানেলের টপোগ্রাফিক সার্ভে, প্রকল্পের প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম মূল্যায়ন, ট্রাফিক সার্ভে পরিচালনা, পরিবেশ সংক্রান্ত সমীক্ষা, প্রাথমিক ডিজাইন প্রণয়ন ও প্রাক্কলন প্রস্তুত, অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি মূল্যায়ন ও তা হ্রাসকরণের ব্যবস্থা চিহ্নিত করা। এ প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যয় হবে ১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। এ বিষয়ে ‘প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি ফর কনস্ট্রাকশন অব টানেল আন্ডার দ্য রিভার যমুনা’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ২২ অক্টোবর এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, পিইসি সভার পর প্রকল্পটি অনুমোদন দেবেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর তা একনেকে পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

তবে যমুনা নদীর কোন অংশে এ টানেল নির্মাণ হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে গাইবান্ধা জেলার বালাশীঘাট এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ঘাটে সংযোগ টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সূত্র জানায়, সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থেই হাতে নেয়া হচ্ছে ‘যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা’ শীর্ষক মূল প্রকল্পটি। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সব প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করার কথা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের। এরই মধ্যে প্রাক-সমীক্ষার কাজও শেষ হয়ে যাবে। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৫-২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে জাপান আগ্রহ দেখায়। এ প্রকল্পসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান সরকারের ঋণ প্রদানের বিষয়ে যৌথ ইশতেহার স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) জানিয়ে দিয়েছে, তারা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে না। যমুনা টানেল বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে সম্ভাব্য সমীক্ষা পরিচালনার জন্য বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও আইডিবির কাছে কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নিজস্ব অর্থায়নে সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল এক ডিও (আধা সরকারিপত্র) পত্রে মুখ্য সচিব উল্লেখ করেন, বাস্তবে যদি রেলপথ রাখার কারণে নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রে রেলপথ বাদ দিয়ে শুধু সড়কপথ নির্মাণ করা যৌক্তিক হবে। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এ ৩ নদী দেশকে ভৌগোলিকভাবে উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল- এ ৪ ভাগে বিভক্ত করেছে। যমুনা নদী ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রথমে পদ্মা এবং এরপর মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার প্রশস্ততা অনেক বেশি। বর্ষাকালে ৮ থেকে ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত হয়ে থাকে। এ নদী দিয়ে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয় এবং ৬০০ মিলিয়ন টন পলি বহন করে থাকে। পলি বহনের বিবেচনায় যমুনা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পানি প্রবাহের দিক থেকে অন্যতম বৃহত্তম নদী। পলি জমার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেতুর পরিবর্তে টানেল নির্মাণ সুবিধাজনক হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে বালাশী এবং বাহাদুরাবাদ অবস্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে টানেলের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে।

অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গাইবান্ধা জেলার বালাশীঘাট এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ঘাটে সংযোগ টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া হয় পরিকল্পনা কমিশনে। ২৭ মার্চ এ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগে ন্যূনতম ব্যয়ে প্রি-ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হবে। এ স্টাডিতে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।