দাউদকান্দিতে হচ্ছে আধুনিক নৌ-বন্দর

কুমিল্লা দাউদকান্দির মেঘনা নদীর পাড়ে আধুনিক নৌ-বন্দর করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বন্দরটি প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইতিমধ্যে দাউদকান্দি-হোমনা-রামকৃষ্ণপুর ৫০ কিলোমিটার নৌপথ ড্রেজিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

চলতি বছর জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম আগামী ২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে খননের কাজ শেষ হলে নৌযান চলাচলও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, নৌপথের ব্যবহার বাড়লে একদিকে সড়কের ওপর চাপ কমবে, অন্যদিকে মানুষ নিরাপত্তার সঙ্গে কম খরচে যাতায়াত করতে পারবে। এ জন্য দেশে দাউদকান্দিতে নতুন করে নৌ-বন্দর চালু করা হচ্ছে। এ নৌ-বন্দর চালু হলে শুধু মানুষের যাতায়াতই নয় স্বল্প খরচে মালামাল বহন করা সম্ভব হবে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে বলেও মন্ত্রী জানান।

নৌমন্ত্রী বলেন, বিগত সরকারগুলোর সময় অযতœ ও অবহেলায় দেশের অনেক নদী নাব্য হারিয়ে ফেলেছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নদীগুলোর নাব্য ফিরিয়ে আনা ও খননের কাজ গতিশীল করেছে। সরকার ২০০৯ সাল থেকে ১৩ সাল পর্যন্ত ১৪টি ড্রেজার কিনেছে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আরো ২০টি ড্রেজার কেনার কাজ চলছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে আরো ৫০টি ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব ড্রেজার দিয়ে নদী খননের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৮০ কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হয়েছে বলে নৌমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, নদী খনন ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য তিনটি এক্সকাভেডর ক্রয় করা হয়েছে, আরো ৬টি এক্সকাভেডর ক্রয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ)।

শাজাহান খান বলেন, ঢাকার চারদিকে নদী তীরের উচ্ছেদকৃত ভূমি পুনরায় যাতে দখল না হয় সেজন্য বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ব্যাংক প্রটেকশনসহ ২০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। চলতি মেয়াদে আরো ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ হবে। পর্যায়ক্রমে ঢাকা শহরের দুপাশে ২৪০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে বলেও মন্ত্রী জানান।

জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএর অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৫৩টি রুটে (প্রথম পর্যায়ে ২৪টি রুট) নদী খনন প্রকল্পের আওতায় দাউদকান্দি-হোমনা-রামকৃষ্ণপুর নৌপথে ৫০ কিলোমিটার ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশ নৌবাহিনী গোমতী, মেঘনা ও তিতাস নদীর দাউদকান্দি-হোমনা-রামকৃষ্ণপুর নৌপথে ১৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করবে। দাউদকান্দি ব্রিজ হতে হোমনা হয়ে রামকৃষ্ণপুর পর্যন্ত নৌ-পথটি ২০০ ফুট প্রশস্ততা ও ১২ ফুট গভীরতায় খনন করা হবে। এতে সারাবছর ৪ মিটার গভীরতার নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারবে। ফলে দাউদকান্দি হতে হোমনা-রামকৃষ্ণপুর এলাকায় নৌপথে সরাসরি নৌ-যোগাযোগ চালু হবে এবং যোগাযোগও উন্নত হবে বলে মনে করছেন বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হক বলেন, মৃত নদীগুলোকে উদ্ধারের জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। ড্রেজিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে নৌবাহিনীকে। তিনি বলেন, ৩৩টি নৌপথ আমরা খনন করছি। এর মধ্যে আমরা (বিআইডব্লিউটিএ) ৪০ শতাংশ বাস্তবায়ন করব। বাকি খনন করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ নৌপথে ৫৩টি রুটে (প্রথম পর্যায়ে ২৪টি রুট) নদী খনন প্রকল্পের আওতায় দাউদকান্দি, হোমনা ও রামকৃষ্ণপুর নৌপথের ক্যাপিটাল ড্রেজিং কাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

বিআইডব্লিটিএর ড্রেজিং বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের ৫৩টি নৌপথ আর ঝুঁকিপূর্ণ থাকবে না। ১৯ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে। নৌপথের মার্কিং হিসেবে প্রয়োজনীয় লাইটেড বয়া, বিকন বাতি স্থাপন করা হবে। এতে সারাবছর ৪ মিটার গভীরতার নৌযানসমূহ চলাচল করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

বিআইডব্লিউটএ সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএর সংরক্ষণ, খনন কর্মসূচির আওতায় নৌ-চলাচলে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ ফেরি ও নৌপথগুলোর নাব্য অক্ষুণœ রাখার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলোর নাব্য উন্নয়ন কল্পে ৫৩টি নৌপথে ৯ বছর মেয়াদী ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সূত্র জানায়, ৫৩টি পথে ক্যাপিটাল ড্রেজিং (১ম পর্যায় ২৪ নৌপথ) প্রকল্পের ডিপিপির ওপর পরিকল্পনা কমিশনে ২০১০ সালের ২২ আগস্ট পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ড্রেজিং দরপত্র পুননির্ধারক পূর্বক ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়।