আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের সরকার গঠন করে গ্রামীণ এলাকার অবকাঠমো উন্নয়নে এমপিদের প্রথমে ১৫ কোটি টাকা করে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করার সুযোগ দেয়। পরে দশম সংসদে তা বাড়িয়ে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। গত মাসেও তাদের সুযোগ দেওয়া হয় পছন্দের মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, গীর্জা, প্যাগোডা, খেলার মাঠ উন্নয়নে ব্যয় করার। এবার স্থানীয় নেতৃত্বের জায়গা গ্রামীণ বাজার উন্নয়নেরও সুযোগ পাচ্ছেন তারা। ‘দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পে এবার এমপিরা বরাদ্দ পাবেন ৬ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করার। কারণ ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫২০টি বাজার উন্নয়ন করা হবে। গ্রাম পর্যায়ে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যই তাদের এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। ২০২০ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ করা হবে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে এ প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। যা সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর-এলজিইডি। সংশ্লিস্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরে ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এমপিদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে ২০১০ সালের মার্চে ৪ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করে। ওই সময় প্রত্যেক এমপিকে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় গত দশম সংসদের নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে ৬ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় এমপিদের। ২০১৫ সালের মে মাসে তার অনুমোদন দেয় সরকার। এতে সিটি কর্পোরেশনের বাইরে এমপিরা বরাদ্দ পেয়েছেন ২০ কোটি টাকা করে। যা আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই শেষ হয়ে যাবে। তাই নির্বাচনের আগে দেশব্যাপী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গত মাসে ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ের জন্য আলাদা প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা এমপিরা পছন্দমতো মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশান, গীর্জা, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা এবং খেলার মাঠ উন্নয়নে ব্যয় করতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ধরে রাখতে এমপিরা আবারো পাচ্ছেন স্থানীয় নেতৃত্বের জায়গা বাজার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ। গ্রাম পর্যায়ে ব্যবসার পরিবেশ সৃষ্টি, গ্রামীণ বাজার উন্নয়নের মাধ্যমে কৃষি ও অকৃষি পণ্যের বাজারজাত সুবিধা প্রদান একান্ত দরকার। কারণ দেশের গ্রামীণ অবকাঠমোর উন্নয়ন হলেও তা সার্বিকভাবে সন্তোষজনক নয়। এরফলে গ্রামীণ হাট-বাজারের পূর্ণ সুবিধা পাচ্ছেন না কৃষক ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে স্বল্প দামে কৃষকদের পণ্য বিক্রি করতে হয়। তাতে তারা পণ্যের নায্যমূল্য পাচ্ছেন না। অপরদিকে একই পণ্য ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে যে সব গ্রামীণ বাজার জেলা ও উপজেলা বাজারের সঙ্গে উন্নত সড়ক, রেলপথ ও নৌপথ যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে এলজিইডি মন্ত্রণালয়। যেসব গ্রামীণ বাজার সরকারি ডাকের আওতায় রয়েছে, সপ্তাহে একদিন হলেও হাট বসে এবং প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বেচাকেনা হয় সেসব স্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে সারা দেশের সব উপজেলার উৎপাদিত পণ্যের নায্যমূল্য দিতে ৫২০টি বাজার উন্নয়ন করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি অর্থে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এক একর জমিতে ৪ তলা ভিত্তির ওপরে বর্তমানে ২ বা একতলার এ বাজার হবে। প্রতিটি তলায় থাকবে ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার বর্গফুট জায়গা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে। এর ব্যয় অনুমোদনের জন্য আগস্টে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। তা যাচাই-বাছাই করতে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ায় তা সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তাই সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানায়।