দিনাজপুরে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ

এ অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মত্স্য উৎপাদনের ক্ষেত্রগুলো সংকুচিত হলেও দিনাজপুরের নদীতে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।

আগে নদীতে সবসময় পানি ছিল না। কিন্তু এখন রাবার ড্যামের কারণে সারা বছর পানি প্রবাহ থাকায় খাঁচায় মাছ চাষ সহজে করা যায়। রাবার ড্যামের উজানে এই খাঁচায় মাছ চাষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষিরা সুফল পাওয়ার পাশাপাশি অনেক লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আবার জেলার মত্স্য চাহিদা পূরণেও অবদান রাখছে। নদীতে এই পদ্ধতিতে চাষ করলে মাছও সুস্বাদু হয়।
জেলা মত্স্য বিভাগ জানায়, নতুন এ প্রযুক্তিতে আমিষের ঘাটতি পূরণসহ বেকার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। এই পদ্ধতিতে চাষ করলে বেকার সমস্যাসহ মাছের ঘাটতি পূরণ সম্ভব। গত বছর থেকে দিনাজপুর সদর উপজেলার আত্রাই নদীর মোহনপুর রাবার ড্যামকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ইউনিয়ন পর্যায়ে মত্স্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প। প্রতিটি খাঁচায় রয়েছে মনো সেক্স তেলাপিয়া পোনা ৬ থেকে ৮ হাজার।

যা ৩ মাসের মধ্যে বাজারজাত করা যায়। খাঁচায় মাছ চাষ করার পদ্ধতি উপজেলা মত্স্য অফিস থেকে শেখানো হয়েছে। রাবার ড্যামের কারণে শুষ্ক মৌসুমে এলাকায় ১০ হাজার হেক্টর জমি আবাদের পাশাপাশি এখন মত্স্য চাষ হচ্ছে। এতে মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি মাছের চাহিদা পূরণেও অবদান রাখছে। সদরের মোহনপুর রাবার ড্যামের উজানে বেসরকারিভাবে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন নুরুজ্জামান, সাইদুর রহমান, জিন্নাত হোসেনসহ অনেকে। এ ব্যাপারে জিন্নাত হোসেন জানান, আমি ১০টি খাঁচায় মাছ চাষ করি। খাঁচাগুলো তৈরিতে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। খাঁচাগুলোর সাইজ ২০ ফুট ী ১০ ফুট ী ৬ ফুট আকৃতির।
তিনি জানান, খাঁচায় মাছ চাষ করলে রোগবালাই কম হয়। পানি যেহেতু প্রবাহমান থাকে তাই পানি দুষিত কিংবা গন্ধ হয় না। এ কারণে খাঁচায় চাষ করা মাছের স্বাদ পুকুরের মাছের চেয়েও বেশি হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে মাছ কোনোভাবে যেন বের হয়ে যেতে না পারে।

দিনাজপুর সদরের সিনিয়র উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, খাঁচায় ৩০ গ্রাম ওজনের পোনা ছাড়া হলে তা ৯০ দিনের মধ্যে ৪০০-৫০০ গ্রাম হয়। আর বাজারদর ১০০ টাকা কেজি থাকলে কমপক্ষে একেকটি খাঁচার মাছ বিক্রি করে ৩ হাজার টাকার অধিক লাভবান হওয়া যায়। তবে বাজার দরের ওপর এর লাভ কম-বেশি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চাষিদের মনে রাখতে হবে সাধারণত ফেব্রুয়ারি-জুন মাস মাছের বাজার ভালো থাকে সেই অনুযায়ী মাছ চাষ করা উচিত। স্থানীয় মত্স্যজীবীর ২০ জনের একটি উপকারভোগী সরকারি সহায়তায় খাঁচায় মাছ চাষ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তবে এ প্রকল্পের লাভ দেখে বেসরকারিভাবেও অনেক মত্স্যচাষি মাছ চাষে এগিয়ে এসেছে এবং এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে দিনাজপুর সদর উপজেলার আত্রাই নদীতে মোহনপুর রাবার ড্যামের উজানে সরকারিভাবে ১০টি এবং বেসরকারিভাবে ৬০টি খাঁচায় মাছ চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও সেতাবগঞ্জে টাংগন নদীতে ১০টি খাঁচায় মাছ চাষ হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে চিরিরবন্দর উপজেলার আত্রাই নদীতে রাবার ড্যামের পূর্বদিকে এবং দিনাজপুর সদরের ঝানঝিরা বাজার এলাকার পাশে আত্রাই নদীতে সরকারি সহায়তায় খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করা হবে। ২০ জনের উপকারভোগী এই মাছ চাষ করবে। পরিকল্পনামাফিক এই মাছ চাষ করলে লাভবানের পাশাপাশি বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। নদীর প্রবাহমান পানি ব্যবহার করে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে, এ ছাড়া বেকার যুবক ও মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সম্ভব।