বহুমুখী ব্যবহার বৃদ্ধির অংশ হিসেবে পাট থেকে ডেনিম কাপড় তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রথমে পাট ও তুলার মিশ্রণে সুতা তৈরি করা হবে। সেই সুতা থেকে বানানো হবে ডেনিম কাপড়। উৎপাদিত কাপড় থেকে প্যান্ট, জ্যাকেট ও শার্টের মতো পোশাক বানিয়ে রফতানি করা হবে। পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতে কাপড় সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ জন্য সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প শক্তি অনুবিভাগ প্রকল্পটি মূল্যায়ন শেষে একনেকে উপস্থাপন করবে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কম্পোজিট জুট টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ইউনিট নামে এ কারখানা স্থাপন করবে বিজেএমসি। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আওতাধীন অধিকাংশ পাটকল লোকসানে রয়েছে। বন্ধও রয়েছে অনেক পাটকল। নতুন এ কারখানা স্থাপনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬৯ কোটি টাকা।
প্রকল্প দলিল (ডিপিপি) থেকে
হজানা গেছে, দেশের পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি, পাটের বহুমুখী ব্যবহার এবং ডেনিমের বিশ্ববাজার ধরতে এ উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট পাট ও তুলা এবং একই রকম আঁশ জাতীয় দ্রব্যের সংমিশ্রণে সাশ্রয়ী মূল্যে সুতা উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উন্নতমানের ডেনিম কাপড় তৈরি করা যাবে। যা থেকে উন্নতমানের ডেনিম প্যান্ট, জ্যাকেট, শার্ট তৈরি হবে।
এসব পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি করে যেমন অতিরিক্ত রফতানি আয় হবে, তেমনি দেশের কারখানাগুলো চালু থাকবে বলে মনে করছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। পোশাক শিল্পের জন্য তিন স্ত্মরের জিএসপি সুবিধা আদায় করতে পরিবেশবান্ধব সংমিশ্রিত সুতা ও কাপড় উৎপাদন সাহায্য করবে। ডেনিম উৎপাদনের পর অতিরিক্ত সুতা থেকে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা যায় এমন বস্ত্র ও মালপত্র তৈরি করা হবে।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্ত্মবায়ন করা হবে। জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে কারখানা স্থাপন করবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। করপোরেশনের খালি জমিতে এ কারখানা করা হবে। চলতি বছরে শুরম্ন করে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্ত্মবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
তবে এ বিয়ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের অধিকাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান লোকসানি। বিজেএমসিও ব্যাপক লোকসান দিচ্ছে প্রতি বছর। ফলে এ সংস্থার ব্যবস্থাপনায় নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে এমন প্রত্যাশা করা কতটা যৌক্তিক তা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। এ জন্য প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায়ও সরকারি সংস্থাটির প্রকল্পটির সফলতা কীভাবে নিশ্চিত করবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জানা গেছে, বিজেএমসির অধীনে বর্তমানে ২৬টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পাটবহির্ভূত পণ্যের। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিজেএমসির লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ৬৫৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।