সাহসী ছয় কিশোরী পুরস্কৃত

ভবিষ্যতেও যেকোনো স্থানে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আমি দৃঢ়প্রত্যয়ী। ’ কথাগুলো বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অসীম সাহসের পরিচয় দেওয়া ছয় কিশোরীর একজন তুলি দেবনাথের। গতকাল বুধবার এই ছয় কন্যা সাহসিকাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক কন্যাশিশু দিবস পালন অনুষ্ঠানে ছয় কিশোরীর হাতে সাহসিকতার ক্রেস্ট তুলে দেন সংসদ সদস্য ও জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলো—এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশনের শামীমা আক্তার, আমিনা খাতুন (নীলা), লিলিমা, ব্র্যাকের মুক্তা আক্তার মৌ, হাঙ্গার প্রজেক্টের শাবানা আক্তার ও ঘাসফড়িংয়ের তুলি দেবনাথ।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গতকাল এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কন্যাশিশুদের নানা চাহিদা ও প্রতিবন্ধকতা সবার সামনে তুলে ধরা এবং তাদের সক্ষমতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ব্র্যাক, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন ও ঢাকায় অস্ট্রেলীয় হাইকমিশন যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি, সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং সমন্বিত উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক আন্না মিনেজর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার স্যালি-অ্যান ভিনসেন্ট, বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ড. মেহতাব খানম, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা প্রমুখ।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মুক্তা আক্তার মৌ জানায়, ‘মা-বাবা না থাকায় মামা-মামি অল্প বয়সেই ওর বিয়ে ঠিক করেন।

তবে এই খবরে সে ভেঙে পড়েনি। বরং বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্টুডেন্ট ওয়াচ গ্রুপের সঙ্গে আলোচনা করে এবং তাদের সাহায্য নিয়ে বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে না বসার ইচ্ছা জানিয়ে এর প্রতিবাদ করে।
পুরস্কার হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত অপর কিশোরীরাও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে অদম্য সাহসিকতা ও তাদের জীবনসংগ্রামের কাহিনি তুলে ধরে।

মমতাজ বেগম এমপি নিজের জীবনের উদাহরণ তুলে ধরে পুরস্কারপ্রাপ্তদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি নিজেই পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে এসেছি। আজ আমি যে এমপি হয়েছি ,এটা আমার অর্জন। আর তা সম্ভব হয়েছে আমার আত্মবিশ্বাসের জোরে। আত্মবিশ্বাস থাকলে তোমরাও বাধা জয় করে এগিয়ে যাবে। ’

স্যালি-অ্যান ভিনসেন্ট বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাল্যবিয়ের হার সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের ৪৬ শতাংশ মেয়েশিশুর ১৮ বছর বয়সের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যায়। এ কারণে অস্ট্রেলিয়া সরকারের বৈদেশিক সম্পর্ক ও বাণিজ্য বিভাগ এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ’

ড. মেহতাব খানম বলেন, ‘মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য সামাজিক ও মানসিক পরিবর্তন দরকার। এ জন্য দরকার রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন। আমাদের সমাজে একটি মেয়ে জীবনের শুরু থেকেই ‘না’ শুনতে অভ্যস্ত। এতে মেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থেকে যায়। ছেলেদের ক্ষেত্রে যা সচরাচর দেখা যায় না। তাই শৈশব থেকেই মেয়েদের মানসিক পরিবর্তন জরুরি। ’

আন্না মিন্জ বলেন, ‘আমাদের দেশে অসংখ্য যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটলেও এর বেশির ভাগেরই বিচার হচ্ছে না। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। ’

অনুষ্ঠানের সহযোগী আয়োজক হিসেবে ছিল গার্লস নট ব্রাইড ও এনগেজ মেন অ্যান্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক।