ঝিনাইদহে বিদায় কীটনাশক

বর্তমানে কীটনাশক ছাড়া ফসল উৎপাদন যেন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কিন্তু সচেতনতা বাড়ায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার অনেক কৃষক মানবদেহ ও পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর এ কীটনাশককে বিদায় জানিয়েছেন। তারা খেতের ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য ফেরোমন ট্র্যাপ ও বিষটোপ ব্যবহার করছেন। এছাড়া কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে পার্চিংয়ের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিষমুক্ত শাকসবজি উৎপাদনে বদলে গেছে অনেক কৃষকের জীবন। কেননা, এতে তেমন খরচ হয় না। আবার এসব শাকসবজির চাহিদাও বেশি। ফলে লাভ বেশি।
সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম জানান, স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে আমন ধানে লোগোসহ সারিতে রোপণ, জমিতে ধান রোপণের পরপরই ধৈঞ্চা রোপণ এবং জমিতে গাছের ডাল পুঁতে পার্চিং তৈরি করে সফলভাবে পোকা দমন করা সম্ভব হয়েছে। যেখানে কীটনাশক ব্যবহার না করলেও চলে। একই গ্রামের কৃষক জামাল হোসেন জানান, জমিতে ডাল পুঁতে পার্চিং তৈরি করতে কৃষকদের কোনো খরচ হয় না। শুধু ইচ্ছে থাকলেই এটা করা সম্ভব। এতে কীটনাশকের টাকা বেঁচে যায়। এছাড়া ফসল হয় বিষমুক্ত। এ বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, কৃষক জমিতে পার্চিং ব্যবহার করলে দুইভাবে লাভবান হবেন। একটি অর্থ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধবভাবে পোকামাকড় দমন। অপরটি পার্চিং তৈরি। এতে সাধারণত আফ্রিকান ধৈঞ্চা গাছ ব্যবহার করা হয়। এ গাছের দেহে এবং শিকড়ে বড় নভিউল থাকে যেখানে রাইজোরিয়াম নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া থাকে যা প্রকৃতির আলো, বাতাস থেকে নাইট্রোজেন তৈরি করে। ফসল এটা সহজে গ্রহণ করতে পারে। ফলে জমিতে নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের ব্যবহারের পরিমাণ কম করলেও চলে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ড. খান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, উপর্যুপরি রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মাটির আর্দ্রতা নষ্ট হচ্ছে। পানি ধারণক্ষমতা কমছে এবং অণুজৈবিক কার্যাবলি ব্যাহত হচ্ছে। এতে মাটির উৎপাদন ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সে কারণে জৈব এবং প্রাণিজ সার ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্যা ও ক্ষরা সহনশীল জাতের বীজ ব্যবহার, লাইন লোগো পদ্ধতি, কীটনাশকের বিকল্প হিসেবে পার্চিংয়ের ব্যবহার করানো হচ্ছে। যেখানে কৃষক সম্পূর্ণ বিনাখরচে ক্ষতিকর পোকা দমন করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তাই এ পদ্ধতি ব্যবহারে কৃষকরা দারুণভাবে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।