দুই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

বৃহত্তম রংপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বড় অংকের বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে বৃহত্তর রংপুর জেলা অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় পর্যায়) শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রংপুর বিভাগের আটটি জেলার ৮০ শতাংশ উপজেলা সড়ক, ৫৫ শতাংশ ইউনিয়ন সড়ক এবং ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ইতিমধ্যেই অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় বিভিন্ন ব্যয় কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কাজ শেষ করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।

প্রকল্পের ব্যয় কমানো প্রসঙ্গে কৃষি,পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য এ.এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী এর আগে যুগান্তরকে বলেছিলেন, পরিকল্পনা কমিশনের কাজই হচ্ছে অহেতুক এবং অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যয় কমানো। এক্ষেত্রে প্রস্তাব পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে তারপরই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠনের মাধ্যমে একনেক বৈঠকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। ব্যয় কমানোটা সিস্টেমের মধ্যেই পড়ে। পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা জেলায়। গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বেশ কিছু সুপারিশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রকল্পের শিরোনাম বৃহত্তর রংপুর-দিনাজপুর জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন পরিবর্তন করে শুধু বৃহত্তম রংপুর জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) রাখতে হবে। এছাড়া বিদ্যমান পরিপত্রের নিয়ম অনুযায়ী ২৫ কোটি টাকার বেশি হলে সেই প্রকল্পে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে তা করা হয়নি। ফলে প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হলে তা অবস্থানগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে কার্যকরী হবে কিনা সে বিষয়ে স্কিমওয়ারী মতামত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযোজন করতে হবে।

সম্প্রতি প্রকাশিত পিইসি সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৮ জেলার ৫৮টি উপজেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির রাস্তা নির্মাণ বা মেরামত করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে রাস্তার পরিমাণ, এ পর্যন্ত কতটুকু নির্মাণ করা হয়েছে, কতটুকু বাকি আছে এবং এ প্রকল্পের আওতায় কতটুকু করা হবে তার তুলনামূলক বিবরণী ডিপিপিতে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া গ্রামীণ সড়কে যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা সড়ক, ইউনিয়ন সড়ক ও গ্রাম সড়কগুলো যথাক্রমে ১৮ ফুট, ১২ ফুট,ও ১০ ফুট প্রশস্ততায় নির্মাণ করা যৌক্তিক হবে বলে মতামত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। সেইসঙ্গে গ্রাম সড়ক যেন ১০ ফুট প্রশস্ততার কম নির্মাণ করা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। ০

যেসব খাতে ব্যয় কমানো হয়েছে : এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৪৬টি হাটবাজার উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটির জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সভায় আলোচনা সাপেক্ষে প্রতিটি বাজারে ব্যয় থেকে ১৫ লাখ টাকা করে কমিয়ে ৩৫ লাখ টাকা করার সুপারিশ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৮টি অফিস ভবন সম্প্রসারণ বাবদ ২৪ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব জেলায় এলজিইডির অফিস উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব জেলায় একেবারেই অপরিহার্য কেবল সেসব জেলায় ভবন সম্প্রসারণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ১৬ একর ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ৮ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ভূমির পরিমাণ কমিয়ে ৮ একর এবং অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে ৪ কোটি টাকা রাখতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দেশি প্রশিক্ষণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাবদ ২ কোটি টাকার সংস্থান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতে ২ কোটি টাকা রাখার সপারিশ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রকল্পে প্রকিউরমেন্ট পরিকল্পনায় প্রায় প্রতিটি প্যাকেজের বিপরীতে একাধিক ক্রয় পদ্ধতি এবং আর্থিক বিধি অনুযায়ী ক্রয় অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনা যথাযথভাবে প্রণয়ন করে একক ক্রয় পদ্ধতি এবং অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট করার তাগিদ দেয়া হয়েছে।