খুব বেশি পরিশ্রম না করেও মাত্র এক মাসেই লাখপতি সীতাকুণ্ডের সাড়ে ৯০০ কৃষক। আর এটি সম্ভব হচ্ছে ব্যতিক্রম রং ও স্বাদের লাল পেয়ারা চাষে। ‘বাংলার আপেল’ খ্যাত এই লাল পেয়ারার চাষ হয় স্থানীয় পাহাড়গুলোতে। তবে পাইকারদের হাত ধরে তা সারা দেশে রপ্তানি হয়ে লাখ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। ফলে এই পেয়ারা চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছে নতুন নতুন চাষিরা। এমনকি বিদেশে যাওয়া ছেড়েও অনেক প্রবাসী লাল পেয়ারা চাষ শুরু করেছে।
কৃষি অফিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ডে এবার মোট ৯৫ হেক্টর পাহাড়ে লাল পেয়ারার চাষ করেছে ৯৫২ জন কৃষক। সরেজমিনে চন্দ্রনাথ ধামের মহাদেবপুর পাহাড়ে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকায় পেয়ারার চাষ হয়েছে। হাজার হাজার পেয়ারা গাছে থোকা থোকা পেয়ারা। কৃষকরা জানায়, সাধারণ পেয়ারার মতো লাল পেয়ারার বাইরের রং সবুজ কিংবা হলদে। তবে ভেতরের মাংসল অংশ লালচে গোলাপি।
রং ও স্বাদের কারণেই কৃষকরা একে বাংলার আপেল নামে আখ্যায়িত করেছে। সীতাকুণ্ড পৌর সদরের মধ্যম মহাদেবপুর চৌধুরীপাড়ার সফল পেয়ারা চাষি আরিফ জানান, তিনি বাহরাইনপ্রবাসী ছিলেন। দেশে অনেকে পেয়ারা চাষ করে বিদেশের চেয়ে বেশি টাকা আয় করায় তিনি পেয়ারা চাষে উদ্বুদ্ধ হন। কয়েক বছর ধরে পেয়ারা চাষ করছেন তিনি। তাঁর বাগানে ২ হাজার পেয়ারা গাছ আছে। জুনের শেষ থেকে পেয়ারা তোলা শুরু হয়। পেয়ারা বাজারেও নিতে হয় না, পাইকাররা বাগান থেকে কিনে নেয়। পাইকারি দরে এক ঝুড়ি (২৩-২৪ কেজি) পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। জুনে বিক্রি শুরুর দিকে দাম আরো বেশি ছিল।
তিনি জানান, এক মাসে লক্ষাধিক টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। সেপ্টেম্বরে আরো এক-দেড় লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রাশেদ জানান, ২ একর বাগানে তিনি লাল পেয়ারা চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি এক লাখ ১০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন। এই বাগান থেকে ৩ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী। আরেক কৃষক মো. আনোয়ার বলেন, ‘যাঁরা পেয়ারা চাষ করছেন তাঁরা সবাই লাভবান হচ্ছেন। কারণ, পেয়ারার চাষ হয় পাহাড়ের ঢালে। এখানে বৃষ্টি বা বন্যার কোনো সমস্যা নেই।
অন্যদিকে সমতলে যারা সবজি চাষ করেন বর্ষায় তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই তিনিও বহু বছর ধরে পেয়ারা চাষ করেন। তাঁর জমি থেকে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি হয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরো ২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি হবে। চট্টগ্রাম থেকে পেয়ারা কিনতে আসা এক পাইকার মো. সোহেল বলেন, পাইকারিতে ২০-২৫ টাকা কেজিতে কিনে আমরা খুচরা ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি করি। দ্বিগুণ লাভ হয়। লাল পেয়ারার চাহিদাও দারুণ। তাই ৩ মাস পেয়ারা কিনে বিক্রি করলে খরচ বাদ দিয়েও কয়েক লাখ টাকা লাভ থাকে। সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, এখানকার লাল পেয়ারা সারা দেশে বিখ্যাত। যেমন রং, তেমনি স্বাদ। সব পেয়ারায় ভিটামিন সি থাকলেও লাল রঙের কারণে এই পেয়ারায় যুক্ত হয়েছে ভিটামিন এ। তিনি বলেন, ৯৫২ জন চাষি লাল পেয়ারা চাষ করে এখন লাখপতি। প্রতি মাসে তারা লাখ লাখ টাকা আয় করে এ মৌসুমে। একজন চাষি সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করেন। এই পেয়ারা সারা দেশে রপ্তানি হওয়ায় এলাকার অর্থনীতিও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বলে জানান তিনি।