অগ্রাধিকার পাবেন বন্যাদুর্গতরা
দেশের গরিবদের স্বাবলম্বী করতে আগামী অক্টোবর থেকে বিশেষ ঋণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এর আওতায় ১০টি খাতে গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঋণ দেওয়া হবে। আড়াইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী হবেন দেড় কোটি জনগণ। তবে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে অগ্রাধিকার। আপাতত দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের ১৮টি জেলায় শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে প্রকল্পটি সারাদেশে নেওয়া হবে। এর আওতায় নামমাত্র সার্ভিস চার্জে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন। ইতিমধ্যে এ প্রকল্প প্রস্তাবনার খসড়া তৈরি করেছে পল্লী উম্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। গ্রাহকদের প্রশিক্ষণ ও তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায়সহ প্রকল্পের বিভিম্ন কাজের তদারকিতে ইতিমধ্যে সাড়ে চারশ’ জনবল নিয়োগেরও অনুমতি
পাওয়া গেছে। শিগগিরই এ জনবল নিয়োগের কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে পল্লী উম্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মাফরূহা সুলতানা সমকালকে বলেন, ঋণ সহায়তার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের করে আনাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে দরিদ্ররা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে উল্লেখ করার মতো ভূমিকা রাখবে। গ্রাম ও ছোট শহরগুলোতে ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি ধরনের উদ্যোগ উম্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা দেখা দেবে। পর্যায়ক্রমে এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণের পরিধি ও আওতা আরও বাড়বে বলেও তিনি জানান।
প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ১০টি খাতে : ‘দারিদ্র্য বিমোচনে এসএফডিএফ কার্যক্রম’ নামে এ প্রকল্পটি পরিচালনা করবে পল্লী উম্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন ক্ষুদ্র কৃষক উম্নয়ন ফাউন্ডেশন (এসএফডিএফ)। যে ১০টি খাতে সরকার এ ঋণ দেবে, সেগুলো হলো- মাঝারি ফার্নিচার, পাটজাত শপিং ব্যাগ তৈরি, ইলেকট্রিক কাজ, ক্ষুদ্র গৃহ নির্মাণ, মাশরুম চাষ, মৌমাছির চাষ, কেঁচো চাষ, মোবাইল সার্ভিসিং ও মেরামত দোকান, ক্রিস্টাল শোপিচ তৈরি। সুনির্দিষ্ট এ খাতগুলো ছাড়াও আরও কয়েকটি জায়গায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ওষুধের দোকান, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও সীমিত আকারে এ কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হবে। এসব কাজে গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এক বছরের জন্য ঋণ দেওয়া হবে।
নিজস্ব বিনিয়োগও থাকতে হবে : প্রকল্পের আওতায় একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হবে। তবে তার নিজস্ব বিনিয়োগও থাকতে হবে। নিজস্ব বিনিয়োগের পরিমাণ (ব্যবহূত জমি এবং ভবন বাদে) কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা হলে সর্বনিল্ফম্ন ৩০ হাজার টাকা এবং নিজস্ব বিনিয়োগের পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা হলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হবে। সব ক্ষুদ্র উদ্যোগের মোট বিনিয়োগ (ব্যবহূত জমি ও ভবন বাদে) ২০ লাখ টাকার বেশি হবে না।
ঋণগ্রহীতারা যেসব সুবিধা পাবেন : ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরুষ বা নারী উভয়েই ঋণগ্রহীতা হতে পারবেন। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে। অবিবাহিত উদ্যোক্তাও ঋণ নিতে পারবেন। মূলত সদস্যদের মাধ্যমে এ ঋণ দেওয়া হবে। তবে কেন্দ্রভুক্ত সদস্যের বাইরে ব্যক্তি উদ্যোক্তা এবং কেন্দ্রভুক্ত ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতার পরিবারের অন্যান্য কর্মক্ষম সদস্য স্বামী, স্ত্রী, ছেলেমেয়েদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে হিসেবে ঋণ দেওয়া যাবে। ঋণভুক্ত পরিবারের সদস্যদের মোট কর্মসময়ের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সময় ক্ষুদ্র উদ্যোগে নিয়োজিত থাকতে হবে। ঋণগ্রহীতাকে অবশ্যই কর্ম এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
এক বছরের জন্য এ ঋণ দেওয়া হবে। গ্রাহকরা তা কিস্তিতে ফেরত দেবেন। গৃহীত ঋণ গ্রাহককে ৫২ কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একটি কিস্তি থাকবে। এ ঋণের সার্ভিস চার্জ সরল হারে সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ হবে। নির্ধারিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করার প্রয়োজনে এক বছরের ঋণগ্রহীতাকে পুনরায় ঋণ দেওয়া হবে। প্রকল্পের মেয়াদ হবে তিন বছর। একজন গ্রাহক এসব খাতে তিন বছরের জন্য ঋণ পেতে পারেন। তবে তার আগের ঋণ পরিশোধ থাকতে হবে। ঋণ পরিচালনায় উপ-আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক নিয়োগ করা হবে। তারা ঋণ দেওয়ার জন্য গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর তথ্য সংগ্রহ করে সদস্য বাছাই করবেন। তাদের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ঋণ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পল্লী উম্নয়ন ও সমবায় বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পারিবারিক আয় বাড়ানোর মাধ্যমে টেকসই উম্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এটি বাস্তবায়ন হলে অর্থনৈতিক সহায়তার মাধ্যমে নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে, উদ্যোক্তা পুঁজি গঠনে সহায়তা পাবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দক্ষতা ও উম্নয়ন ঘটবে। বেকারত্বও অনেকাংশে দূর হবে। অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে ওঠবেন।
উল্লেখ্য, দেশে বিভিম্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনা করছে। তবে এতে সুদের হার অনেক চড়া। এসব ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় ঋণগ্রহীতার ঘরের টিনের চাল খুলে নিয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্তও বিরল নয়। গরিব মানুষের এমন দুর্ভোগ এড়াতে সুখবর দিচ্ছে সরকার। সরকারিভাবে চালু হচ্ছে এ ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প। এ প্রকল্প চালু হলে দরিদ্ররা অন্তত বেসরকারি ঋণের ফাঁদ থেকে মুক্ত হবেন বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।