চাকরিতে যোগ দিলেন দৃষ্টি হারানো সিদ্দিকুর

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে টেলিফোন অপারেটর পদে যোগ দিয়েছেন পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারানো তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান।

সোমবার সকাল ৯টায় তিনি রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে এসে যোগদানপত্র জমা দেন। কর্মক্ষেত্রে প্রথম দিন কাটিয়ে সিদ্দিকুর জানিয়েছেন, তিনি খুবই আনন্দিত, সহকর্মীরা সবাই খুব আন্তরিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে গত ২০ জুলাই আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুরও ছিলেন। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল তার চোখে লাগে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর সিদ্দিকুরের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

সিদ্দিকুর বিকেলে সমকালকে জানান, বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু দৃষ্টি হারানোয় সেই সম্ভাবনা এখন ফিকে হয়ে এসেছে। বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে এই চাকরি পেয়ে তিনি খুবই খুশি। কারণ এখন তিনি তার দরিদ্র পরিবারকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারবেন। আপাতত তিনি তিতুমীর কলেজের পাশের একটি মেসে থাকছেন। সেখানে বন্ধুরা তাকে সব কাজে সহায়তা করছেন। তবে তিনি চেষ্টা করছেন একটি বাসা ভাড়া নেওয়ার। এরপর গ্রামের বাড়ি থেকে মাকে নিয়ে এসে রাখবেন নিজের কাছে। প্রতিদিন তাকে কর্মক্ষেত্রে আনা-নেওয়া করবেন ভাগ্নে সেলিম। প্রথম দিনে অবশ্য বন্ধু শেখ ফরিদ ও শাহ আলীসহ অন্য সবাই সঙ্গে ছিলেন।

সিদ্দিকুর আরও জানান, টেলিফোন অপারেটর হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার ছিল না। দৃষ্টিহীন অবস্থায় সেটা আরও কঠিন। তবে তিনি আশাবাদী, দ্রুতই শিখে নিতে পারবেন। সোমবার সহকর্মীদের সহায়তায় বেশ কয়েকটি কল গ্রহণ করেছেন।

সিদ্দিকুরের বন্ধু শেখ ফরিদ জানান, কর্মক্ষেত্রে প্রথম দিন হওয়ায় তারা প্রায় সারাদিনই বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। তাকে সাহস যুগিয়েছেন নতুন কাজে সফল হওয়ার জন্য। কাজের ফাঁকে একসঙ্গে চা পান করেছেন। সিদ্দিকুর যত দিন প্রয়োজন বোধ করেন, ততদিন বন্ধুদের কেউ না কেউ তাকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করবে।

টিয়ার শেলের আঘাতে আহত সিদ্দিকুরকে প্রথমে জাতীয় চক্ষুবজ্ঞিান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২৭ জুলাই সরকারি খরচে তাকে ভারতের চেন্নাইয়ে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, অলৌকিক কিছু না হলে তার দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা নেই। সেখানে চিকিৎসা শেষে গত ১১ আগস্ট দেশে ফেরেন সিদ্দিকুর।