চাই তারুণ্যের অংশীদারিত্বের স্বীকৃতি

লালমনিরহাটের কন্যা সান্ত্বনা রানী রায়কে গণমাধ্যম “মার্শাল আর্ট কন্যা” বিশেষণ প্রদান করেছে। কৃষক পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি বিশ্ব জয় করে বাংলাদেশের সম্মান বাড়িয়েছেন। উত্তর কোরিয়ায় আয়োজিত ২০তম তায়কোয়ান্দো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি দেশের হয়ে ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন। তার সাফল্য দেশের তারুণ্যকে উদ্বেলিত করবে। এগিয়ে যাবার সাহস যোগাবে। তার নিকট থেকে এগিয়ে যাবার প্রেরণা খুঁজবে হাজারো নারী। তিনি আমাদের নারী সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। শুরুতে তার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। দেশের বিত্তশালী সুহূদ ব্যক্তিবর্গ এবং কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় তিনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। সর্বোপরি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তার এই অর্জন আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করবে। এটি উল্লেখ করা অত্যুক্তি হবে না যে, তার অর্জন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করবার একটি দৃষ্টান্ত। এমন আরো অনেক তারুণ্যের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নীলফামারীতে উদ্যমী একদল তরুণ গড়ে তুলেছেন “চলো পাল্টাই” নামে একটি সামাজিক সংগঠন। সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। সংগঠকরা নিজেদের উদ্যোগে একটি পাঠাগার নির্মাণ করেছেন। পাঠাগারে নিয়মিত শিক্ষামূলক কার্যক্রম চর্চাসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বেকারত্ব দূরীকরণে তাদের উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তারা ফ্রি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকেন। এলাকায় বাল্য বিবাহের হার কমিয়ে আনতে তারা সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংগঠনটি নিজেদের উদ্যোগে নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশলে তাদের কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আরো কয়েকটি বহুল পরিচিত সংগঠন এই অঞ্চলে আছে যারা সামাজিক সমস্যা মোকাবিলা করে সমাজের পরিবর্তন নিয়ে আসার লক্ষ্যে কাজ করে। রংপুরের স্থানীয় তরুণ-তরুণী পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য গড়ে তুলেছেন ইএস ফাউন্ডেশন। ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে তারা স্বপ্নের বীজ বুনেন। তাদের স্বপ্নই আমাদের উন্নয়নের প্রবাহকে বেগবান করবে। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চাই প্রেরণা। অনুপ্রেরণামূলক অনুদান আর স্বীকৃতি পেলে তাদের কাজে আসবে নতুন মাত্রা।

স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়নে নিজস্ব উদ্ভাবনী কৌশলে সমস্যার সমাধান কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এনে দেয় এবং উন্নয়ন ভঙ্গুর হয় না। আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে তারুণ্যের সম্পৃক্ততা জরুরি। স্থানীয় সমস্যা সমাধানে চাই স্থানীয়ভাবে উপযোগী কৌশল। উত্তরের টেকসই উন্নয়নে তরুণদের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো গেলে সমূহ বিপদ মোকাবিলা করা সম্ভব। বন্যা পরবর্তী সময়ে সহানুভূতিশীল তারুণ্য কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে। নিজ উদ্যোগে ফসলের বীজ সংগ্রহ করে কৃষকের হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু কাজগুলোতে আছে সমন্বয়হীনতা। সংগঠিতভাবে কাজ শুরু হলে উত্তরের সকল সংকট কেটে যাবে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে এই সমন্বয় সাধন হতে পারে।

উত্তরের উন্নয়নে তারুণ্যে অংশগ্রহণ আছে। তাদের এখন প্রয়োজন স্বীকৃতি। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট বিশেষ অনুরোধ তারুণ্যের ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তাদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স দ্রুত গঠন করা হোক। মার্শাল আর্ট কন্যা যেমন বিশ্ব দরবারে বাংলার মর্যাদা বাড়িয়েছেন তেমনি একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হলে বন্যা পরবর্তী পুনর্বাসন ও কৃষি ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করে উত্তরের তারুণ্য প্রমাণ করবে উত্তরাঞ্চল মঙ্গাপীড়িত নয়, পরিশ্রমী তারুণ্য মঙ্গা চিরতরে জাদুঘরে পাঠিয়েছে।

আমাদের মেধা আছে এটি প্রমাণিত। তারুণ্যের মেধাকে ব্যবহার করতে পারলে উত্তরে টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তারুণ্যের এগিয়ে যাবার প্রত্যয় সুবিবেচনা করুন।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।