দৃশ্যমান পদ্মা সেতু: বাংলাদেশের সক্ষমতার দৃষ্টান্ত

ষড়যন্ত্র হয়েছে অনেক। কিন্তু থেমে থাকেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আন্তরিক এবং দুঃসাহসিক পদক্ষেপে থেমে যায়নি বাংলাদেশ। যে কারণে বহু প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের কাছে গর্ব ভরে যেন জানান দিচ্ছে আমরা পারি, বাংলাদেশ পারে। ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়েই পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হলো। সেতুর ৪২টি পিলারের ওপর মোট ৪১টি স্প্যান বসানো হলেই নির্মাণ শেষ হবে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণ জনপদের সরাসরি সড়ক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু। প্রথম স্প্যানটি বসানোর পর অন্যান্যগুলো বসানোর কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের জন্য এটি অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ এই সেতুটি তৈরির পোছনে বাংলাদেশকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব পর্যবেক্ষণ শেষে বিশ্বব্যাংক অন্তীম মুহূর্তে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুতে তাদের অর্থায়ন স্থগিত করেছিল। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কানাডীয় একটি কোম্পানিকে পরামর্শকের কাজ পাইয়ে দিতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে সে দেশে একটি মামলা হয়েছিল, যা পরে আদালতে নাকচ হয়ে যায়। একই অভিযোগে বাংলাদেশে দুদক মামলা করলেও তদন্ত শেষে অভিযোগের কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানানো হয়।
দুর্নীতি ও অনিয়মের মিথ্যা অভিযোগে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ দেয়া থেকে বিশ্ব ব্যাংক সরে গেলেও নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো এমন বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া বাংলাদেশ সরকারের জন্য শুধু অনেক বড় চ্যালেঞ্জই ছিল না সে সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষার দায়ও ছিল। এত বড় আর খরস্রোতা একটা নদীর ওপর এত বড় একটা সেতু নির্মাণ বিশ্বের সামনে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তই স্থাপিত হলো না সে সঙ্গে যেন সেতু নির্মাণ হলো আস্থা এবং ভরসারও। তবে এটি যাতে নির্মিত না হয় সে জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। ১৯৭১-এ যারা এ দেশকে চায়নি তারা বরাবরই এদেশের যে কোনো সাফল্যের পথে বাধার সৃষ্টি করেছে। এদেশের পশ্চাৎপদতাই সেই অশুভ শক্তির একমাত্র কাম্য। হয়তো সংঘবদ্ধ সেই অপশক্তির জানা নেই যে সৎ ইচ্ছা এবং সংকল্পে অটুট থাকলে যে কোনো অসাধ্যই সাধন করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করতেই হবে। কারণ তার একক সিদ্ধান্ত এবং দৃঢ়তার কারণেই আজ পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়েছে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ পর্যন্ত প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ৪৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। সেতুতে মোট ৪২টি পিলার থাকবে। এর মধ্যে ৪০টি পিলার নির্মাণ করা নদীতে। বাকি দুটি নদীর তীরে। আশা করা হচ্ছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন শুধু একটি সেতুর জš§ই নয়। এর পেছনে যে নেতার মানসিক দৃঢ়তা, দেশপ্রেম এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রমাণ রয়েছে তাও ইতিহাসে জায়গা করে নেবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ বাস্তবায়ন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাই প্রমাণ করলেন যে, সীমিত সাধ্য দিয়েও শুরুটা করা যায়। এর জন্য প্রয়োজন শুধু সময়োচিত পদক্ষেপ। ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনকারী এই সেতু নির্মাণে অবদানের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।