চোরাচালানি ছেড়ে স্টিয়ারিংয়ে হাত জাইদার

দৃঢ়চেতা, কর্মঠ ও উদ্যমী নারী বেনাপোলের জাইদা খাতুন। নানা ঘাত-প্রতিঘাত, অত্যাচার-নির্যাতনে নিষ্পেষিত জাইদা চোরাচালানি ছেড়ে নরম হাতে ধরেছেন স্টিয়ারিং। এখন তিনি ইজিবাইক চালিয়ে সংসারে ফিরিয়েছেন সুদিন। বেনাপোলে এই প্রথম নারীচালক দেখে হতবাক ও আনন্দিত হয়েছেন অনেকে। এতে অন্য নারীদের মধ্যেও বাড়ছে আগ্রহ। তাকে দেখে সমাজে অবহেলিত অনেক নারী ইজিবাইক চালানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।

বেনাপোলে জাইদা খাতুন এখন বেশ পরিচিত মুখ, বহুল প্রচারিত নাম। বেনাপোলের গাজিপুর গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে তিনি একা থাকেন। ছোটবেলায় তিনি হারিয়েছেন মা ও বাবাকে। অল্পবয়সেই বিয়ে হয় তার। ৪ বছরের ব্যবধানে তার কোলজুড়ে আসে এক ছেলে ও এক মেয়ে। ৫ বছর পর মারা যান স্বামী। সংসার চালাতে তখন বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়েন চোরাচালানিতে। এক পর্যায়ে এক বিজিবি সদস্যের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। চাকরি যায় ওই বিজিবি সদস্যের। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে জাইদা তার সহায়-সম্বল বিক্রি করে স্বামীকে পাঠান বিদেশে। ৯ বছর পর স্বামী দেশে ফিরে তালাক দেন তাকে। জীবিকার তাগিদে ফের জড়িয়ে পড়েন চোরাচালানিতে। এক ঈদে বেনাপোলে বিজিবির হাতে তিনি আটক হন। ৭০ শতাংশ বস্ত্র রেখে নামমাত্র কিছু বস্ত্র দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। সীমান্তে বিজিবির ধরপাকড়ে সর্বস্বান্ত হন জাইদা। এরপর তিনি শুরু করেন নতুন কর্মজীবন। ঋণ নিয়ে একটি ইজিবাইক কিনে যশোর-বেনাপোল সড়কে চালিয়ে ধরেছেন সংসারের হাল।

স্থানীয়রা তার এ কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সবাই তাকে সহযোগিতা করছেন। এতেই খুশি জাইদা। জাইদা বলেন, এখন ভালোই আছি, মানুষ সমাদর করছে। মানুষের ভালোবাসা ও সহযোগিতা নিয়েই বেঁচে থাকতে চান তিনি। জাইদা আরও বলেন, ঘরে থাকতে সব নারীর মন চায়। সবাই চান স্বামীর সংসারে সুখে থাকতে। কজনের ভাগ্যে জোটে সুখ নামের সোনার হরিণ।

স্থানীয় ইজিচালক সিরিয়াল সর্দাররা বলেন, জাইদা নতুন সদস্য। তাই তাকে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। সিরিয়াল ছাড়াই খেয়ালখুশিমতো যাত্রী বহনে উপার্জন হচ্ছে ভালো। সংসারের কাজের ফাঁকে সকাল-বিকাল ইজিবাইক চালিয়ে দিনে উপার্জন করছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এতে ভালোই চলছে তার সংসার। এ কাজে তিনি সরকারসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।

শার্শা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রাজ কুমার পাল বলেন, সরকার নারীকে সব বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নারীকে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের আওতায় আনতে কাজ করছে মহিলা অধিদফতর। কর্মঠ ও উদ্যোগী নারী জাইদা বিভিন্ন পেশা ছেড়ে ইজিবাইক চালাচ্ছেন। অন্য নারীরাও তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে। এ কাজে প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সহযোগিতা করবে উপজেলা মহিলা অধিদফতর।