শখের তিতিরে সচ্ছলতা

শখের বশে তিতির পাখি পালনে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন শেরপুর জেলার নকলা উপজেলাধীন চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের হুজুরিকান্দার জানকীপুর এলাকার শিক্ষার্থী তাওহীদুল হক ও পল্লী চিকিৎসক মোঃ খাইরুল হক খোকন। সংসারে এসেছে সচ্ছলতা। তাদের সফলতায় এলাকার অনেকেই তিতির পালনে আগ্রহী হয়েছেন। বিনা ভ্যাকসিনে, স্বল্প বিনিয়োগে, অল্প জায়গায় তিতির পালন করা যায়।

তাওহীদুল জানান, আগে সবাই তিতিরকে শখের বশে পালন করলেও বর্তমানে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে পালন করছেন। তিতিরকে দামি কোনো খাবার ও সময় দিতে হয় না। শস্যবীজ, শস্যদানা, কচি শাকসবজি, ফলমূল, পোকামাকড়, কচি ঘাস ও লতাপাতা খেয়েই তারা জীবন ধারণ করে। খোকনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি বকশীগঞ্জ থেকে ১৫ দিন বয়সের ১০০টি তিতিরের বাচ্চা প্রতিটি ৪২০ টাকা দরে কিনে আনেন। তাতে বাচ্চা কিনার দাম, ঘর নির্মাণ, খাবার পাত্র কিনা, খাবার কিনাসহ প্রথমিকভাবে পৌনে ২ লাখ টাকা খরচ হয়। ৬ মাসের মধ্যে প্রতিটি তিতির ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ গ্রাম ওজনের হয়। প্রতিটির বর্তমান বাজারমূল্য ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। তিনি বলেন, ডিম ও বাচ্চা উৎপাদনের লক্ষ্যেই এ তিতির খামার গড়ে তুলেছেন। ১০০টি তিতিরের মধ্যে ১৫টি পুরুষ তিতির আছে। এরই মধ্যে প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০টি ডিম পেতে শুরু করেছেন। প্রতি হালি ডিম ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তার দেয়া হিসাব মতে, তার খামারের ৮৫টি স্ত্রী তিতির একসঙ্গে ডিম দিলে প্রতিদিন সাড়ে ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করতে পারবেন। তাতে ডিম থেকেই তার মাসিক আয় হবে ২ লক্ষাধিক টাকা। এ বছরের শেষদিকে তিনি খামার আরও সম্প্রসারণ করবেন। এ লক্ষ্যে ওই খামারের পাশেই নতুন ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। তিনি জানান, এ খামারের আয় দিয়েই সংসারের সব খরচ চলেও আরও সঞ্চয় থাকবে। খোকনের সফলতায় ভুরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার বেশ ক’জন সদস্য তিতির পালনের লক্ষ্যে খোকনের কাছে পরামর্শ নিয়েছেন। তাছাড়া মরাকান্দার মনির, হেলাল, গনপদ্দির ফজলুল হক, চিথলিয়ার আলমগীর, কায়দার আফরিন আন্না ও রাব্বি নূর, ধুকুরিয়ার শামীম ও রিয়াদ, জালালপুরের আলাল, নয়াপাড়ার মিনহাজসহ নকলা পৌরসভার কামারপট্টি এলাকার বেশ ক’জন তিতির পালন করছেন। নকলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ শহিদুল আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিতিরকে সংক্রমণ ও পরজীবী সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। ফলে বাড়তি ওষুধের বা ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হয় না। অনুকূল পরিবেশ পেলে প্রতিটি স্ত্রী তিতির বছরে ১২০ থেকে ১৫০টি ডিম দিয়ে থাকে। উন্মুক্তভাবে তিতির পালন করতে হলে ৩৫০টি তিতিরের জন্য এক একর জমি দরকার। আর রাতে ঘরে থাকার জন্য প্রতিটির সাড়ে তিন বর্গফুট জায়গা উত্তম। এ বিষয়ে কৃষকদের উৎসাহ ও পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। তিনি বলেন, সমান খাবার ও একই সময়ে হাঁস, মুরগি, কবুতরের চেয়ে তিতিরে দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। তাই গ্রামীণ কৃষক এ পাখি পালনের দিকে ক্রমান্বয়ে ঝুঁকছেন।