ভালো মানের চা বিক্রিতে এগিয়ে মধুপুর বাগান

ভালো মানের চা বিক্রিতে এগিয়ে মধুপুর বাগান ভালো মানের চা বিক্রিতে এগিয়ে মধুপুর বাগান
চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত প্রতিটি আন্তর্জাতিক নিলামে ভালো মানের চায়ের গ্রেড বিন্যাস তৈরি করে ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। সর্বশেষ নিলামের (২০তম) শীর্ষ ১০ অবস্থানের নয়টিই দখলে নিয়েছে সিলেটের মধুপুর চা বাগান। প্রতিটি আন্তর্জাতিক নিলামে ভালো মানের চা সরবরাহ ও বিক্রিতে বাগানটির সুনাম রয়েছে। তবে কোনো একক বাগান থেকে ৯০ শতাংশ সবচেয়ে ভালো মানের চা সরবরাহ ও বিক্রির ঘটনা এবারই প্রথম। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি ভালো মানের চা উৎপাদনের আগ্রহই এ খাতে মধুপুর বাগানকে এগিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত চায়ের ২০তম আন্তর্জাতিক নিলামে মধুপুর বাগান থেকে সরবরাহ করা ৪ হাজার ৯৫০ কেজি চা বিক্রি হয়। কেজিপ্রতি ৩০২ টাকা দরে সর্বোচ্চ দামের ১০ প্যাকেট চা কিনে নেয় হক ও শাহী নামের দুটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। মধুপুর বাগানের বিভিন্ন দামের বাকি চা কিনেছে আবুল খায়ের, আফতাব, মেঘনা, মোল্লা ও বনানী গ্রুপ। এ নিলামে ভালো মানের চা সরবরাহ ও বিক্রিতে মধুপুর বাদে শীর্ষ ১০-এর অন্য একটি প্রতিষ্ঠান রাজঘাট টি এস্টেট। এ বাগান থেকে সরবরাহ করা ১০ প্যাকেট ভালো মানের চা কিনে নেয় পূর্বাশা নামের একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে প্রতি কেজি চা ২৬৬ টাকায় বিক্রি হয়। সে হিসাবে ভালো মানের চা সরবরাহ ও বিক্রিতে এগিয়ে ছিল মধুপুর চা বাগান। আগের নিলামগুলোয়ও বাগানটি ভালো মানের চা সরবরাহ ও বিক্রিতে এগিয়ে ছিল। ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারলে চলতি নিলাম মৌসুমে ভালো মানের চা সরবরাহ ও দামের দিক থেকে শীর্ষ তিন বাগানের মধ্যেই থাকবে সিলেটের এ চা বাগান।
বিটিটিএর সাবেক সহসভাপতি আবদুল হাই বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে হাতে গোনা কয়েকটি বাগান ভালো মানের চা উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে মধুপুর চা বাগান অন্যতম। পানীয় পণ্যটির সামগ্রিক উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতি বছর সবচেয়ে উত্কৃষ্ট মানের চা উৎপাদনের দিকে মনোযোগী রয়েছে এ বাগান। দেশে চা উৎপাদন বাড়লেও সে তুলনায় ভালো মানের চা কম উৎপাদন হয়। এ পরিস্থিতিতে ভালো মানের চা উৎপাদনে মধুপুর চা বাগান একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এ ধারাবাহিকতায় অন্য বাগানগুলোও ভালো মানের চা উৎপাদনে এগিয়ে এলে পণ্যটির আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সুনাম আরো বাড়বে।
এদিকে নিলাম প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বশেষ নিলামে ৪৮ হাজার ৩৩৭ প্যাকেটে মোট ২৬ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৫ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করা হয়, যা পূর্ববর্তী বছরের একই নিলামের তুলনায় প্রায় দেড় লাখ কেজি বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ চা বিক্রি হয়েছে। আগামী সপ্তাহে ২১তম নিলামে ৪৭ হাজার ২০৫ প্যাকেটে মোট ২৫ লাখ ১০ হাজার ৩৬০ কেজি চা বিক্রির জন্য প্রস্তাব করবে ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলো।
চা উৎপাদনের মৌসুম মাঝামাঝি পর্যায়ে রয়েছে। এ সময় নিলামে পণ্যটির সরবরাহও বেড়েছে। তবু কয়েকটি নিলামে ধারাবাহিকভাবে চায়ের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ১৯তম নিলামে প্রতি কেজি চা গড়ে ২১১ টাকা দরে বিক্রি হলেও সর্বশেষ নিলামে পণ্যটি ২১৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ নিয়ে ১৬তম নিলাম থেকে পাঁচটি নিলামে টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে চায়ের দাম। ভরা মৌসুমে ভালো মানের চা সংগ্রহে ক্রেতাদের আগ্রহের কারণে এর দাম ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে আট কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু চায়ের চাহিদা ছিল ৮ কোটি ২০ লাখ কেজি। এ কারণে সে সময় বাংলাদেশ থেকে চা রফতানি হয়েছে। বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য থাকতে হয়। একই সঙ্গে বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতেও চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য রাখা জরুরি। তা না হলে চাহিদা পূরণে আমদানি করার বিকল্প নেই। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাজার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য দেশের চা বাগানের মালিকদের মানসম্পন্ন ও অধিক পরিমাণে চা উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তা না করে উল্টো আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় বাজার পরিস্থিতি আরো অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে। পণ্যটির দাম বাড়লে বাড়তি মূল্যের বোঝা ভোক্তাদেরই বইতে হবে। চলতি মৌসুমে চা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত হওয়ায় উৎপাদন বেড়েছে। এ কারণে সরকার চা আমদানি নিরুসাহিত করতে শুল্ক বাড়িয়েছে। ফলে দেশে উৎপাদিত চায়ের বিক্রি বেড়েছে। বাজারে একদিকে বেচাকেনা বৃদ্ধি, অন্যদিকে ভালো মানের চা সরবরাহ বাড়ায় দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।