আলোহীন বেলী জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছেন

জন্মের তিন বছর পর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দু’চোখের আলো হারান বগুড়ার শাহজাহানপুরের চুপিনগরের বেলী খাতুন। দৃষ্টিহীন হয়ে বেলী পরিবার আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকেননি। অদম্য ইচ্ছার জোরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। আলোহীন বেলী এখন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
বেলী খাতুন জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে এসএসসি, ২০০৪ সালে কাজী আজিমউদ্দীন কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তার বাবার নাম মো. জামাল উদ্দীন ও মা জামিলা বেগম। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বেলীর অবস্থান পঞ্চম।
লেখাপড়া শেষে মেনিস্ট্রিবল উইথ ডিজেবেলিটি ইন বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমানে তিনি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইল্ড সাইট ফাউন্ডেশনে (সিএসএফ) চাকরি করছেন। এ প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের খুঁজে বের করে ব্রেইলি পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করে থাকে। আর এ কার্যক্রমের আওতায় বেলী খাতুন বিভিন্ন এলাকার ছয় জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শিক্ষার আলো।
একজন প্রতিবন্ধী মানুষ হওয়া সত্ত্বেও নিজের চেষ্টা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আজ তিনি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন নিজেই চাকরি করে সংসার চালাচ্ছেন। সেই সঙ্গে নিজের জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার আশপাশের গ্রামগুলোর দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুর মধ্যে। পাশাপাশি সমাজিক দায়বদ্ধতাগুলো পালন করছেন তিনি। বেলী বর্তমানে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার খঞ্জনদিয়া গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকেন। মাসিক বেতন পান আট হাজার টাকা। এর মধ্যে ঘরভাড়া ও নিজের খরচ করার পর প্রতি মাসে এক হাজার টাকা তার মাকে দেন।
বেলী বলেন, চোখের আলো হারানোর পর থেকে কত যন্ত্রণা, কতজনের কটু কথা শুনতে হয়েছে। আর দুই বোন প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাবা-মাকেও শুনতে হয়েছে নানা জনের নানা কথা। তারপরও পরিবার আর আমার চেষ্টায় আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলীর কাছে ব্রেইলি পদ্ধতিতে লেখাপড়া শিখছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী কেয়ামনি। আট বছর বয়সী কেয়ামনির দৃষ্টিহীনতা নিজের বড় হওয়ার স্বপ্নকে মুছে ফেলতে পারেনি।
বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০ হাজার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে। এর মাত্র ১০ ভাগ শিশু ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষিত প্রতিবন্ধীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, প্রতি উপজেলায় দুই থেকে ৩০০ প্রতিবন্ধী রয়েছে। এদের স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রতিটি উপজেলায় প্রতিবন্ধী সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।