জাতিসংঘ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ১ লক্ষ ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি- প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে এক লাখ ডলার টোকেন অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন প্রতিরোধ’ বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে তিনি অনুদানের এ ঘোষণা দেন।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত শেখ হাসিনা এই বৈঠকে অংশ নিয়ে যৌন নিপীড়ন ও হয়রানি বন্ধে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

তিনি বলেন, ধর্ম, সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধকে সম্মান করে শান্তি প্রতিষ্ঠার অভিযানে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও পেশাদারিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ।

“জাতিসংঘ শান্তি মিশনে ১৩২ জন বীর সন্তানের আত্মত্যাগ শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রতিশ্রুতি পুর্নব্যক্ত করেছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অর্থবহ অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ অবিচল রয়েছে।

শান্তিরক্ষীদের মাধ্যমে যাতে কেউ যৌন নির্যাতন বা হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়টিকে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে বলেও জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সবগুলো মিশনে সুনাম ধরে রেখেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে শক্তিশালী নৈতিক মূল্যবোধ, কার্যকর অনুপ্রেরণা ও শৃঙ্খলার কারণে।

তিনি বলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে পাঠোনোর আগে যৌন নির্যাতন ও হয়রানির বিরুদ্ধে সুরক্ষার বিষয়ে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠলে নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ রয়েছে সামনের কাতারে। বর্তমানে বাংলাদেশের ৭ হাজার ১৩ জন জাতিসংঘের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিচ্ছেন, যার মধ্যে রয়েছেন ২১৩ জন নারী।

১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের সময় বাংলাদেশের ১৩২জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শান্তি মিশনে যৌন নির্যাতন ও হয়রানির যে কোনো অভিযোগ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে আমাদের কন্টিনজেন্ট কমান্ডারকে আইনগত ও প্রশাসনিক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তারা মিশন এলাকায় অভিযোগের তদন্ত ও বিচার করতে পারে। সবচেয়ে জেষ্ঠ্য শান্তিরক্ষী তার মিশন এলাকায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা নিতে পারেন।”

যৌন সহিংসতার নিন্দা জানতে গিয়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের কথাও বৈঠকে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন দুই লাখ নারী।

তাদের বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দিয়ে পুনবার্সনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথাও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সভাপতিত্বে ফিনল্যান্ড ও উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট এবং ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রী উচ্চ পর্যায়ের এ আলোচনায় অংশ নেন।