দুর্যোগে ভরসা নারীদের ফুড ব্যাংক

বরগুনার আমতলী উপজেলার দুটি ইউনিয়নে এনএসএস নামক একটি বেসরকারি সংস্থার অক্সফ্যাম রিকল প্রকল্পের উদ্যোগে আরপাঙ্গাশিয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের ১০ গ্রামের অসহায় দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুড ব্যাংক । ২০১১ সাল থেকে আমতলী উপজেলার আরপাংগাশিয়া ও গুলিশাখালী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে কাজ শুরু করে এ প্রকল্পটি। শুরুতেই এলাকায় গ্রামের সব পরিবারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে সিবিও গঠনের কাজ শুরু হয়। ১০টি গ্রামে ২৭টি গ্রামোন্নয়ন সংগঠন (সিবিও) তৈরি হয়। এই সিবিওর কমিটিকে ঘিরেই ২৪ হাজার মানুষের যাবতীয় উন্নয়ন ও আত্মনির্ভরশীলতার কাজ চলে আসছে।
এর পর সিবিওগুলো নিয়মিত মসিক সভা করে আসছে। সভায় দুর্যোগ নিরসন, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন প্রতিরোধসহ বিভিন্ন আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকা- নিয়ে আলোচনা ও সঞ্চয়ী মনোভাব তৈরির লক্ষ্যে ফুড ব্যাংক সৃষ্টির উদ্যোগ নেয় সিবিওর সদস্যরা ।
এই ফুড ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য হলো দুর্যোগকালীন বা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও ভুক্তভোগি সদস্যদের সহায়তা প্রদান। বর্তমানে ২৭টি সিবিওতে এই ফুড ব্যাংকের মাধ্যম সঞ্চয় কার্যক্রম সিবিওর সদস্যদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে ২৭টি সিবিওতে ফুড ব্যাংকে সঞ্চয়ের পরিমাণ হচ্ছে ১১,৮৬,৯৫৭ টাকা। এর মধ্যে অক্সফ্যাম রিকল প্রকল্প সাপোর্ট দিয়েছে ৩,৪২,৮২২ টাকা।
আরপাংগাশিয়া ইউনিয়নের মোহনা সিবিওর হতদরিদ্র সদস্য আলতাভানু, লালভানু কুলসুম জানান, ফুড ব্যাংক তহবিল সিবিওর জন্য একটা আশীর্বাদ । ইতিপূর্বে সিবিওর অনেক সদস্যই ইচ্ছা সত্ত্বেও নিজেরা সঞ্চয় করত না । এখন মাসে তারা ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ বা তদূর্ধ্ব টাকাও জমা করেন । এই সঞ্চিত টাকা সিবিওর ক্যাশিয়ার জমা নেন ও পাশ বইয়ে এন্ট্রি দেন। সম্মিলি্লত সঞ্চয় আমতলীতে নির্ধারিত ব্যাংকে জমা রাখেন। সদস্যদের ইচ্ছা প্রতিটি সিবিওতে বড় অঙ্কের টাকা জমা হলে সদস্যদের ঋণ প্রদান বা উন্নয়নমূলক কাজ চালু করা ।
আরপাংগাশিয়া ইউনিয়নের মোহনা সিবিওর হতদরিদ্র সদস্য আলতাভানু, লালভানু কুলসুম ও আরও অনেক সদস্যই বলেন, সিবিও না অইলে মোরা সঞ্চয় করতে পারতাম না। সিবিওর মধ্যে আইয়া মোগো আগ্রহ তৈরি হইছে।
বর্তমানে তাদের প্রত্যেকের ২-৩ হাজারেরও বেশি টাকা সঞ্চয় জমা হয়েছে। দরিদ্র মানুষের মাঝে বিশেষ করে সিবিওর উদ্যোগে এ ধরনের সঞ্চয়ী মনোভাব তৈরি সত্যিই প্রশংসনীয় বিষয় বলে জানান এলাকার সাধারণ মানুষ। এখন অনেকেই সিবিওর সঞ্চয় স্পৃহার কারণে ব্যক্তিগতভাবেও সঞ্চয় করতে শুরু করেছে। সঞ্চয় ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়, দুর্যোগ ও আপদকালীন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এ বিশ্বাস এখন সিবিওর প্রতিটি সদস্যদের মাঝে তৈরি হয়েছে। তাদের আশা তহবিল গঠনের মাধ্যমে সংগঠনগলো একদিন অনেক বড় হবে। প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন , সমন্বয়ের মাধ্যমে গ্রামের অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো সংগঠিত হয়ে যে অর্থ জমা রাখে তা দুর্যোগ ও আপদকালীন সময়ে বেশ উপকারে আসবে ।
অক্সফ্যাম রিকল প্রকল্পের টেকনিক্যাল অফিসার সৈয়দা মনিরা সুলতানা সখি জানান, সিবিওর সদস্য ছাড়া ও যারা আছে এখন সিবিওর সদস্যদের ফুড ব্যাকে টাকা জমা দিতে দেখে তারা ও স্বইচ্ছায় নিজেরা ফুড ব্যাংক তৈরি করে টাকা জমা দিতে শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা এনএসএস নির্বাহী পরিচালক শাহাবুদ্দিন পাননা বলেন, সঞ্চয় ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগকালীন বা দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণই হচ্ছে ফুড ব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য। আমতলী ডিগ্রি কলেজের ( অব.) প্রভাষক মো. আনোয়ার হোসেন আকন বলেন, সঞ্চয় যে কোনো মানুষের উপকারে আসে। সিবিওর মাধ্যমে ফুড ব্যাংকে হতদরিদ্র মানুষগুলো যে অর্থ জমা রাখছেন এটা মহৎ উদ্যোগ।