শেয়ার লেনদেনে জনপ্রিয় হচ্ছে মোবাইল অ্যাপস

নব্বইয়ের দশকে পুঁজিবাজারে কাগুজে শেয়ার লেনদেন হতো। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের আশপাশে বস্তাভর্তি কাগুজে শেয়ার নিয়ে ডাক হাঁকতেন মালিক। দরদামে ক্রেতার মনোযোগ আকৃষ্ট হলে শেয়ার লেনদেন হতো। কাগুজে শেয়ার কেনার পর প্রক্রিয়া শেষে লেনদেন সম্পন্ন হতো। এখন সেই দৃশ্য পাল্টেছে। আগের অবস্থা আর নেই। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে অটোমোটেড বা স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থায় কাগুজে শেয়ারকে বিদায় জানিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শেয়ার লেনদেন চালু হয়।

কাগুজে শেয়ার লেনদেনের পরিবর্তে অটোমেটিক মেশিনে অর্ডার দিলেই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হাতবদল সম্পন্ন হয়ে যায়। নতুন গতি পায় পুঁজিবাজার। প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নতিতে এখন ঘরে বসেই মোবাইল অ্যাপসে লেনদেন হচ্ছে। শারীরিক কোনো পরিশ্রম ছাড়ায় ইন্টারনেট সংযুক্তি আর স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই শেয়ার লেনদেন সম্পন্ন হচ্ছে।

ফলে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পুঁজিবাজারের মোবাইল অ্যাপস ‘ডিএসই-মোবাইল’।

সূত্র জানায়, আশির দশকে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন চালু হয়। তবে এই প্রক্রিয়া পরবর্তী সময় সব স্টক এক্সচেঞ্জেই ছড়িয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থা চালু হয়। স্বয়ংক্রিয় লেনদেন চালুর পাশাপাশি প্রযুক্তির উৎকর্ষে মোবাইল ফোনেও লেনদেন চালু করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। স্মার্টফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে ঘরে বসেই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় চলছে। আর ক্রমেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই মোবাইল অ্যাপসের। কোনো ব্রোকারেজ হাউসে না এসেও ঘরে বসে শেয়ার ব্যবসা সম্ভব।

ডিএসই সূত্র জানায়, প্রযুক্তি ও ব্যবসা-বাণিজ্য একসঙ্গেই জড়িত। এই লক্ষ্যে সহজসাধ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারে বিনিয়োগকারীকে সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৬ সালের ৯ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে চালু হয় ‘ডিএসই-মোবাইল’ নামের একটি অ্যাপস, যা গুগল প্লে স্টোর থেকে বিনা মূল্যে ডাউনলোড করে স্মার্টফোনে সংযুক্ত করতে হয়। ব্রোকারেজ হাউসের কাছ থেকে পাসওয়ার্ড ও আইডি নম্বর নিয়ে শেয়ার কেনাবেচা ও পোর্টফোলিও এবং মার্কেটের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকা যায়।

জানা গেছে, ডিএসই-মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকেই শেয়ার কেনা-বেচা করা যাবে। স্মার্টফোনে বাজার ও নিজ পোর্টফোলিওর সঙ্গে সরাসরি থাকতে পারবে বিনিয়োগকারীরা। ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপে ব্যবহারের জন্যও ডিএসই-ইনভেস্টর নামের অ্যাপস রয়েছে। এই অ্যাপস সংযোজনে বা রেজিস্ট্রেশনে বাড়তি কোনো ফি নেই।

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মোবাইল অ্যাপসে লেনদেনে বিস্তর সুবিধা রয়েছে। রাজধানীর ট্রাফিক জ্যাম ফেলে শেয়ার ব্যবসা করতে আসতে হয় না। এমনকি সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেও অফিসে বসেই শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সম্ভব হচ্ছে। বাড়তি কোনো সময় ব্যয় না করে ঘরে বসে শেয়ার লেনদেন হচ্ছে।

বিনিয়োগকারী সালাম শেখ কালের কণ্ঠকে বলেন, কোন শেয়ার কিনব বা বেচব তার জন্য এখন ব্রোকারেজ হাউসে আসতে হয় না। মোবাইল ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে পোর্টফোলিও দেখা ও শেয়ার লেনদেন করা সম্ভব হচ্ছে। আগে শেয়ার লেনদেন ও পোর্টফোলিও দেখতে সংশ্লিষ্ট ব্রোকারেজ হাউসে আসতে হতো। এখন আর ব্রোকারেজ হাউসেও আসতে হয় না। এতে যেমন সময় বাঁচছে তেমনি লেনদেনও সহজসাধ্য হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় লেনদেনে গতি এসেছে। ’

স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেনে মোবাইল অ্যাপস ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। চলতি আগস্ট মাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা আরো বেড়ে ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। ক্রমাগতভাবেই এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশের পুঁজিবাজার বিকাশের ক্ষেত্রে সংযোজিত হয় ডিএসই মোবাইল অ্যাপ। এই অ্যাপস চালুর পর ক্রমবর্ধমান হারে মোবাইলে লেনদেন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত এ হিসাব দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৬৪৫ জন। অ্যাপসটি চালুর পর শুরুতে তেমন সাড়া না থাকলেও পরিচিতি পাওয়ার পর ক্রমেই সংখ্যা বাড়ছে। চালুর পর প্রথম চার মাসে গ্রাহকসংখ্যা ছিল দুই হাজারের মতো। ডিসেম্বরে মোবাইলে গ্রাহকসংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। চলতি বছরের সাত মাসে বেড়েছে প্রায় ১০ হাজারের বেশি।

গত তিন মাসের হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি মাসে গড়ে এক হাজারের বেশি মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে লেনদেনকারী বেড়েছে। ২০১৭ সালের ৩১ মে সময়ে অ্যাপস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ২৮১ জন। জুন মাসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৪৮ জন। আর জুলাই মাসে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৩৯৯ জন।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাজেদুর রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা বিনিয়োগকারীকে দিতেই এই মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে লেনদেন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ব্রোকারেজ হাউসে আসা ছাড়াই বিনিয়োগকারী শেয়ার লেনদেন করতে পারছে। ’