লবণসহিষ্ণু পাটে নতুন সম্ভাবনা

পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে দেশী পাটের লবণসহিষ্ণু নতুন চার জাতের পাট চাষে শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে। এর ফলে কৃষি অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। তবে কৃষককে সম্পৃক্ত করে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদনের জন্য উপকূলের পতিত লবণাক্ত জমিকে আনতে হবে চাষের আওতায়। এতে সোনালি আঁশ পাট ফিরে পাবে তার হারানো গৌরব আর কৃষক হবে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। এমনটাই মনে করছেন গবেষণা কর্মকর্তারা।

কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২ দশমিক ৮৬ হেক্টর পরিমাণ আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ ভাগ জমি চাষযোগ্য। আর ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে রয়েছে বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততা। যা ক্রমেই অনাবাদি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য লবণাক্ত জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ভোলা, বরগুনা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী এবং পিরোজপুর। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমি খরিপ-১ মৌসুমে লবণাক্ততার কারণে পতিত পড়ে থাকে। এসব পতিত জমিকে পাট চাষের আওতায় আনার জন্য ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাখিমারা গবেষণা ব্লকে দেশি পাটের লবণসহিষ্ণু চারটি জাতের পরীক্ষণ চালানো হয়। স্থানীয় কৃষকদের পতিত জমিতে এ জাতের পাট চাষে পাওয়া গেছে শতভাগ সফলতা। এর ফলে কৃষকের মাঝে দিন দিন বাড়ছে এ জাতের পাট চাষের আগ্রহ। তবে স্থানীয়ভাবে পাটের বাজার না থাকায় উৎপাদিত পাট বিক্রি নিয়ে কৃষকরা রয়েছে নানা সমস্যায়।

মিশ্রীপাড়ার কৃষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, বর্ষাকালে আমন চাষের পর জমি পতিত পড়ে থাকে। শুকনো মৌসুমে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় আর ফসল চাষ করা যায় না। পাট গবেষণা কর্মকর্তাদের কথায় তিন বছর ধরে পাট চাষ করে বেশ ভালো ফলন পেয়েছি। খাজুরার কৃষক আবু জাফর বলেন, এসব জমিতে বাপ-দাদাদের কখনও পাট চাষ করতে দেখেনি। দুই বছর ধরে চাষ করে আমি সার্বিকভাবে লাভবান। জমি পতিত থাকে না। একই গ্রামের কৃষক বেল্লাল শেখ বলেন, চাষের সময় পানির সমস্যায় ভুগতে হয়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে পাটের বাজার না থাকায় বিক্রি নিয়ে সমস্যায় রয়েছি। পাটচাষিরা আরও জানান, পাট বপনকালীন সময়ে সেচ সমস্যা আর উৎপাদিত আঁশের বাজারজাত সমস্যা এই দুইটির সমাধান করা গেলে আগামী দিনে উপকূলীয় এলাকায় পাট চাষ ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হবে।

লবণসহিষ্ণু পাটের জাতের উদ্ভাবক ড. মাহমুদ আল হোসেন বলেন, বর্তমান সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের পাট ও পাট জাতীয় ফসলের কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও হস্তান্তর প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু দেশি পাট-৮ জাতের ১৪ডিএস/মিটার এবং ৯ডিএস/মিটার মাত্রার সহনশীল চারটি লাইন উদ্ভাবন করা হয়েছে। কৃষকের জমিতে মাঠ মূল্যায়নের মাধ্যমে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পশ্চিম খাজুরায় ১৩ দশমিক ৪৫ডিএস/মিটার, মম্বি পাড়ায় ১১ দশমিক ৬ ডিএস/মিটার, মিশ্রীপাড়ায় ৮ দশমিক ৩০ ডিএস/মিটার এর সফলতা পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষি নির্ভরশীল আমাদের দেশ, প্রতিনিয়ত বাড়ছে মানুষ। কমছে কৃষি জমি। দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে কৃষির উপর নির্ভর করে। সেখানে কৃষি জমি পতিত থাকলে অর্থনীতির চাকা স্থবির হয়ে পড়বে। তাই উপকূলীয় এলাকার সব কৃষককে পাট চাষে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে সব পতিত জমিকে পাট চাষের আওতায় আনতে হবে। আর এজন্য সরকারিভাবে পাইলট প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। আরও কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনতে হবে।

উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত জমিতে পাট চাষের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিজেআরআই মহাপরিচালক ড. মনজুরুল আলম বলেন, স্থায়ীভাবে কৃষকদের সমস্যার সমাধান এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি তাদের পাট চাষে সম্পৃক্ত করা গেলে কৃষি অর্থনীতিতে আসবে গতিশীলতা, কৃষক হবে অর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, পাট ফিরে পাবে তার হারানো অতীত। আর পতিত থাকবে না কোনো জমি।